আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।
আমন ধান রোপণ শেষে কর্মহীন থাকা প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষিদের বাড়ির মজুদকৃত ধান শেষ হয়ে যায় বলে তারাও এ সময়ে অভাবে থাকেন। জেলার মধ্যে প্রায় সবকটি উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়।
বাংলা মাস আশ্বিন ও কার্তিককে (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত) জেলার মধ্যে প্রায় সবকটি উপজেলায় বলা হতো মঙ্গা মাস। যার অর্থ প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা।
আমন চারা রোপণ শেষ হলে দরিদ্র শ্রমজীবীদের কাজ না থাকায়, তাদের কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা থাকে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ক্রান্তিকালে তাদেরকে অর্ধাহার-অনাহারে থাকতে হতো।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) গবেষণায় আবিষ্কার মঙ্গাজয়ী স্বল্পমেয়াদী আমন ধান স্বর্ণা, ব্রি জজও ধান ৫০, বিনা-১৯, এবং ব্রি-৮১ উল্লেখযোগ্য. কিছু কৃষক আমন মৌসুমে ফলন কম হওয়ার কারণে শুধুমাত্র বীজ তৈরির জন্য মিনিকেট ধানের চাষ করেন, তবে ইরি-বোরো মৌসুমে মাঠজুড়ে মিনিকেট ধানের চাষ দেখা যায় সহ অন্যান্য কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাতের ধানের কারণেই আশ্বিনে মানুষের ঘরে ঘরে আজ নতুন ধানের নবান্ন উৎসব।
এছাড়াও, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় মিলন হোসেন নামের এক কৃষক নতুন জাতের ধান চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন, যা লাভজনক হওয়ায় এলাকার অনেকেই এখন এই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন জনতারকথা কে বলেন, নতুন জাতের ধানগুলো রোপণের পর মাত্র ৯০-১০০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পেকে যায়। অথচ প্রচলিত জাতের গতানুগতিক ধানগুলো রোপণের প্রায় ১৪০-১৫০ দিন পরে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকে।
তিনি আরও বলেন, 'নতুন জাতের ধান আগেভাগে কাটা যায় বলে কৃষক ২ মাস আগেই তাদের জমি খালি পেয়ে যান। ফলে তারা প্রথমবার আগাম জাতের আলু আবাদ করে, দ্বিতীয়বার আবার আলু, সরিষা কিংবা অন্য যেকোনো রবি ফসল আবাদ করতে পারেন। পরে তারা ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারছেন।'
সম্প্রতি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সহপরিদর্শন করে দেখা যায়, উৎসবের আমেজে আগাম জাতের আমন ধান কাটা চলছে পুরোদমে।
আমলা ইউনিয়ন শাহাপুর গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন ইসলাম (৫৫) জনতারকথা কে বলেন, 'আমি ৪ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ব্রি ধান-৩৮ আবাদ করে ৬০ মণ ফলন পেয়েছি। বাজার মূল্য ভালো থাকায় কাঁচা অবস্থায় তা বিক্রি করে ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছি। সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে ৪০ হাজার টাকা লাগলেও, এখন লাভ পাওয়ায় ভালো লাগছে।'
কাকিলাদহ গ্রামের কৃষক বিনোদ বিহারী রায় (৬০) জানান, আগাম আমন কাটার পর তিনি জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কুষ্টিয়া কৃষি অঞ্চলের অতি কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাসিরুদ্দীন সোহেল জনতারকথা কে বলেন, সংকটকালে স্বল্পমেয়াদী আগাম জাতের আমন ধান কেটে নেওয়ার সুযোগ থাকায় কৃষক ক্রমেই এই ধান চাষে ঝুঁকছেন। তারা একই জমিতে গতানুগতিক ৩ ফসলের পরিবর্তে একই চক্রে ৪টি ফসল ফলানোর সুযোগ পেয়ে বেশি লাভবান হবেন।