আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় তীব্র মানবিক সংকট নিরসনে পদক্ষেপ না নিলে ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। শুক্রবার সিঙ্গাপুর সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াংয়ের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মানবিক অবরোধ একটি অস্থির ও অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। যদি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে আমাদের সম্মিলিত অবস্থান আরও কঠোর করতে হবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েলের তিন মাসব্যাপী অবরোধে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, প্রতি পাঁচ জনের একজন চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় সামান্য পরিমাণ খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দিলেও বাস্তব পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত নতুন বেসরকারি সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএএফ)-এর মাধ্যমে যে সামান্য সহায়তা পৌঁছেছে, তা দুর্নীতি, লুটপাট ও সহিংসতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
একাধিক সহায়তা কেন্দ্র সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার গাজার মধ্যাঞ্চলে সহায়তা নিতে আসা লোকজনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালালে বেশ কয়েকজন আহত হন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, তাদের জর্ডানের আম্মানে থাকা গুদামে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসামগ্রী মজুত রয়েছে। অনুমতি মিললেই গাজায় পৌঁছানো সম্ভব বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ম্যাক্রোঁ বলেন, ইসরায়েল সব সময় মানবাধিকার মেনে চলছে—এই অনুমান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমি এখনও আশা করি ইসরায়েল সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে এবং আমরা অবশেষে একটি মানবিক সাড়া দেখতে পাবো।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি শুধু নৈতিক কর্তব্য নয়, এটি একটি রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তাও। তবে এই স্বীকৃতির আগে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ অন্যতম।
এর আগে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে ম্যাক্রোঁ গাজা দখল বা সেখান থেকে বাসিন্দাদের বিতাড়নের যেকোনও পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেন।
ফ্রান্স ও সৌদি আরব আগামী ১৭-২০ জুন একটি জাতিসংঘ সম্মেলনের সহ-আয়োজক হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করবে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্যারিস ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে কূটনৈতিক সমর্থন জোগাড়ে সচেষ্ট।