
জামালপুর প্রতিনিধি।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের অনুষ্ঠানে গরুর মাংস পরিবেশন নিয়ে বর ও কনে পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বরসহ অন্তত ২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। ঘটনার পর বিয়ে সম্পন্ন না করেই বরপক্ষ নববধূকে না নিয়েই কনের বাড়ি থেকে ফিরে যান।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন।
এর আগে সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্য়ায় উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের গোদাশিমুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
কনে পক্ষের পক্ষ থেকে বরপক্ষকে খাবারে গরুর মাংসে অনিয়ম করা হয়, যা থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত বলে জানিয়েছে অনেকেই।
জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের শুভগাছা গ্রামের আমিনুর আকন্দের ছেলে আবু বক্করের (২৪) সঙ্গে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের গোদাশিমুলিয়া গ্রামের আছাদুল্লাহর মেয়ের বিয়ে হয়। পারিবারিক কারণে আনুষ্ঠানিকতা কিছুটা বিলম্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেই আনুষ্ঠানিক বিয়ের আয়োজনেই কনে বাড়িতে সমবেত হন বর ও তার আত্মীয়স্বজন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে খাবার পরিবেশন শুরু হলে বরপক্ষ অভিযোগ করেন, তাঁদের প্রত্যাশিত পরিমাণে গরুর মাংস দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি, এরপর বচসা এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ শুরু হয়। মুহূর্তেই ঘটনাস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—আব্দুল মাজেদ সরদার (৪৮), রিপন সরদার (৪৫), রুকন সরদার (৩৮), বাবু (৩২), লাভলু (৩৫), শহিদুল্লাহ (৩৬), বুরুজ বাবুর্চি (৪৫), আল আমিন (৩০), আলমগীর হোসেন (২৫), মাহফুজ (৩৫), আবু সামা (৪৫) এবং কনের নানা আব্দুল মালেক (৫৫)।
এছাড়াও দুই পক্ষের আরও ১০-১২ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, তবে কেউ গুরুতর আহত নন বলে জানা গেছে।
বর আবু বক্করের চাচা আব্বাস আলী বলেন, ‘খাবার পরিবেশনের সময় সামান্য কথা-কাটাকাটির পর কনে পক্ষের লোকজন আমাদের কয়েকজনের ওপর হামলা চালায়। আমাদের ৯টি মোটরসাইকেলের মধ্যে কয়েকটি ভাঙচুর করা হয়, এবং এখনো পাঁচটি মোটরসাইকেল কনে বাড়িতে আটকে আছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় কনে পক্ষের লোকজন তাঁদের আটকে রাখে এবং পরিস্থিতি খারাপ হলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে চরপাকেরদহ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমাছ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিকেলে খাবার পরিবেশনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। পুলিশ এসে বরপক্ষকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
খবর পেয়ে মাদারগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কনে পক্ষের একাধিক ব্যক্তি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আল মামুন বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে গুরুতর কেউ নন। এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।