
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরটির মেয়র কারেন ব্যাস কারফিউ জারির এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার (১১ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কঠোর অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে শহরের কেন্দ্রীয় একটি অংশে কারফিউ ঘোষণা করেন মেয়র কারেন ব্যাস।
মেয়র কারেন ব্যাস জানিয়েছেন, এই কারফিউ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কারফিউটি শহরের মাত্র এক বর্গমাইল (প্রায় ২.৬ বর্গকিলোমিটার) এলাকা জুড়ে কার্যকর হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ব্যাস বলেন, এই বিক্ষোভের কারণে এখন পর্যন্ত অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। শুধু গত রাতেই ২৩টি দোকান লুট করা হয়েছে। আপনি যদি ডাউনটাউন এলএ-তে গিয়ে থাকেন, দেখবেন সর্বত্রই গ্রাফিতি- যা ব্যবসা ও সম্পত্তির বিশাল ক্ষতি করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার বার্তা হলো- যদি আপনি ডাউনটাউন এলএ-তে বসবাস না করেন বা কাজ না করেন, তবে দয়া করে ওই এলাকা এড়িয়ে চলুন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারফিউ ভঙ্গকারীদের গ্রেফতার করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়র ব্যাস আরও জানান, এই কারফিউ কয়েকদিনের জন্য বহাল থাকতে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, কারফিউ কেবল শহরের একটি ছোট অংশেই (প্রায় ৫০২ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে মাত্র ১ বর্গমাইল) জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে, ঘটনাগুলো ডাউনটাউনের একটি ছোট অংশে ঘটলেও যেভাবে তা মিডিয়ায় উপস্থাপিত হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন গোটা শহর জুড়ে সঙ্কট চলছে। বাস্তবতা তা নয়।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা পঞ্চম রাত ধরে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক, শিকাগো এবং আটলান্টা সহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক শহরে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় রক্ষী ও মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ক্যালিফোর্নিয়ার নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও উত্তেজনা বাড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন।
মঙ্গলবার রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার জনগণের উদ্দেশে এক ভাষণে গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বলেন, সেনাবাহিনী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল ক্ষমতার এক নির্লজ্জ অপব্যবহার।
এছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসননীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ঠেকাতে গত রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন এবং দ্রুত সৈন্যদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা ফেডারেল ভবনের আশপাশে অবস্থান নেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। গত চার দিনে প্রায় ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।