
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১ হাজার ২২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে এই বাজেট পেশ করেন মেয়র। তিনি বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের সময় চসিকের মোট দেনা ছিল ৫৯৬ কোটি টাকা, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি টাকায়।”
মেয়র জানান, ধারাবাহিক দেনা পরিশোধ, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে কাজ চলছে। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে পৌরকর বাবদ ১৪০ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র জানান, উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৬৫ কোটি ৭৬ লাখ এবং বিশ্ব ব্যাংকের কোভিড-১৯ সহায়তা বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। আয়কর, ভ্যাট এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যত তহবিল ও আনুতোষিকসহ বিভিন্ন খাতে শতকোটি টাকার বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রতি মাসে ৪০০ জনকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আনুতোষিক প্রদান অব্যাহত রয়েছে। জাইকার সহায়তায় আধুনিক বাজেট ও হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অটোমেশন শুরু হয়েছে, যা আগামী অর্থবছরে পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।”
চসিকের নিজস্ব আয়বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, কর ও ট্রেড লাইসেন্স ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করা হয়েছে। বর্তমানে চসিক এলাকায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩টি হোল্ডিং ও ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪টি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরে মেয়র জানান, ১৯টি খাল থেকে ৪১ লাখ ঘনফুট মাটি ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। ড্রেনেজ উন্নয়নে ১৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বর্ষায় আরও ২০০টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। মশক নিধনে আধুনিক পদ্ধতি ও আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে। মেয়র বলেন, “চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির পরেও জিইসি, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়নি, যা আগামীর সফল পরিকল্পনার ইঙ্গিত।”
চসিকের অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ পাহাড়তলীতে ১০ একর জমিতে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ ও কুলগাঁওয়ে বাস-ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণকাজ। শিক্ষা খাতে চসিক প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পুনরায় চসিকের অধীনে আনা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মেয়রের চারটি অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা হলো—চলমান নিয়োগ সম্পন্ন করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন এবং চসিক কার্যক্রমে ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করা।
তিনি আরও জানান, সিটি কর্পোরেশনের পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামোর অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে আবেদন পাঠানো হয়েছে। সিটিজেন চার্টার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে নাগরিক সেবার মান ও সময়সীমা স্পষ্ট করা হয়েছে।
চাকরি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চসিক নিজস্ব জব পোর্টাল চালু করেছে। প্রথম ধাপে ২২টি পদের বিপরীতে ১২৩ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন। উপস্থিত ছিলেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী।