
বরগুনা করেসপন্ডেন্ট।
বরগুনায় ডেঙ্গুর পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দিন দিন। বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগী। এ অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরগুনায় ডেঙ্গুতে ঝড়ে গেছে ২৬ টি তাজা প্রাণ। একের পর এক মৃত্যুর মিছিলে শোকের নগরীতে পরিণত হচ্ছে বরগুনা। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা মোকাবিলায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
মঙ্গলবার (১ জুলাই ) দুপুরে বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ ওয়ার্ডেই শয্যার সংকট দেখা দিয়েছে। বহু রোগীকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নারী ও শিশু ওয়ার্ডসহ মেডিসিন ইউনিটেও একই অবস্থা। অনেক রোগীকে বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই রোগীর অধিকাংশই বরগুনা পৌর শহর ও সদর উপজেলার বাসিন্দা ।
বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বরগুনায় এখ নপর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৫ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৮শ ৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৯৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১৭ জন। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন, এছাড়া দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে জেলায় আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
আইইডিসিআর অনুসন্ধানী প্রতিনিধি দলের টিম লিডার ডা. মো. তারিকুল ইসলাম লিমন বলেন, অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন জায়গায় মশা জন্মায় কিন্তু এডিস মশা পরিস্কার স্বচ্ছ পানিতেও জন্মায় আমরা ধারনা করছি উপকূলীয় জেলা বরগুনায় সুপেয় পানি সংরক্ষণের জন্য যে প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয় তার মাধ্যমেও এডিস মশা জন্মাতে পারে।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাসকিয়া সিদ্দিকী বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও সমানভাবে ভর্তি এবং সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পাওয়ায় ব্যালেন্স হচ্ছে। আর এ কারণেই এখন পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে আমরা স্থান দিতে পারছি। তবে সামনের দিনগুলোতে যদি রোগী সংখ্যা আরও বেশি হয়, তাহলে ওই সময় পরিস্থিতি কেমন হবে তা এখন বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরগুনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৮ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স পদায়ন করা হয়েছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হচ্ছে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে স্থানীয়দের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’না হলে উপকূলীয় এই জেলায় তা মহামারি আকার ধারণ করবে।
উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। ডেঙ্গু প্রকোপের পর থেকেই জেলার হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বরগুনা জেলা।
তবে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই এডিস মশার বংশবিস্তার হয়েছে। তাই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।