স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রাজবাড়ী।
রাজবাড়ী ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) মিটার রিডারম্যান মোক্তার বিশ্বাস (৪০) এর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণা করে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের আনুমানিক ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেছেন দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।
তবে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছে মিটার রিডারম্যান মোক্তার বিশ্বাস বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও বিকাশের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে চার শতাধিক গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকার ওপর হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। পরে জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপে রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মিটার রিডারম্যান মোক্তার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ৪০৬ এবং ৪২০ ধারায় মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তারা বলছে গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিটার রিডারম্যান মোক্তারকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে এবং থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তোভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড চরনারায়নপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাস্টারের ছেলে মো. মোক্তার বিশ্বাস সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওজোপাডিকোর বিদুৎ এর মিটার রিডারম্যান হিসেবে হিসেবে কাজ করে আসছে।
অভিযুক্ত মুক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) এর নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মিটার রিডারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়ে আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিল তৈরি, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ, বিকাশের মাধ্যমে বিল আদায় এবং নতুন সংযোগের নামে অর্থ গ্রহণ করে থাকতো।
২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে ২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং 'বিকাশ' এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে এখন গা ঢাকা দিয়েছে।এখন বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ওই সব গ্রাহকদের বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
ভুক্তোভোগী গ্রাহকরা জানান, মিটার রিডারম্যান মোক্তার অধিকাংশ গ্রাহককে সে ভুয়া বিল প্রদান করে, যা বিদ্যুৎ বিভাগের স্বাক্ষর ও লোগোসহ ছাপানো ছিল।এছাড়াও সে জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকের সিল নকল করে বিলের কাগজের ওপর ব্যাংকের সিল মেরে,সই করে ও সরকারি স্টাম মেরে গ্রাহকদের বিল পরিশোধের কপি দিতো।এই প্রতারণার ফলে আমরা ভুক্তভোগী গ্রাহকগণ এখন প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে আবার অর্থ পরিশোধের চাপের মুখে রয়েছি, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবিচার।
আমাদের যদি মাসের পর মাস বকেয়া বিল থাকতো তাহলে আমাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। যা থেকে বোঝা যায় যে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করেছে।ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবি মিটার রিডার মোক্তার বিশ্বাস প্রায় ৪ শতাধিক গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি উধাও হয়ে গেছেন।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করেছি।তদন্তে গ্রাহকদের অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। যে মিটার রিডারের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে আমরা তাকে অব্যহতি দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।এরপর তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ওজোপাডিকোর সহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাতে মিটার রিডার ম্যান মোক্তারের বিরুদ্ধে প্যানাল কোডের ৪০৬ এবং ৪২০ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।প্রতারক মোক্তারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, আমি আজকেই অভিযোগটি পেলাম। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনলাম।আমি এ বিষয়ে ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।আশা করছি সকলের সহযোগিতায় হয়তো আমরা ভুক্তভোগীদের সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারবো।