
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
গাজায় বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা সাবেক এক ঠিকাদার দাবি করেছেন, তিনি বহুবার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বর্ণনা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাবেক ঠিকাদার জানান, একবার একটি গার্ড টাওয়ার থেকে একজন প্রহরী নারী, শিশু ও বয়স্কদের দিকে গুলি ছোড়ে, যারা শুধু ধীরগতিতে হাঁটছিলেন। ঠিকাদার আরও বলেন, গাজায় মার্কিন-সমর্থিত বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে কোনো স্পষ্ট নিয়মনীতি বা নিরাপত্তা প্রটোকল মানা হয় না। বরং, তাদের বলা হতো, “যদি হুমকি মনে করো, গুলি করো—হত্যা করার জন্য গুলি করো, পরে প্রশ্ন করো।”
তিনি দাবি করেন, বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশ কয়েকজনকে স্টান গ্রেনেডের আঘাতে, পিপার স্প্রের ব্যবহারে এবং সরাসরি গুলিতে আহত হতে দেখেছেন। এক ঘটনায়, একজন নারী স্টান গ্রেনেডের ধাতব টুকরোর আঘাতে মাটিতে পড়ে যান। “সে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল। সে বেঁচে ছিল কি না, জানি না,” বলেন তিনি।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। সংস্থাটি বিবিসিকে দেয়া বিবৃতিতে দাবি করে, সহায়তা বিতরণের সময় কোনো বেসামরিক নাগরিক গুলিবিদ্ধ হননি। বরং অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি একজন “অসন্তুষ্ট ও বরখাস্ত হওয়া” সাবেক ঠিকাদার।
তবে ওই ব্যক্তি দাবি করেন, বরখাস্ত নয়, বরং তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং তার কাছে থাকা বেতন স্লিপ প্রমাণ করে যে, দায়িত্ব ছাড়ার পরও দুই সপ্তাহ তাকে বেতন দেওয়া হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে দায়মুক্তির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এক প্রহরী ফিলিস্তিনিদের “জম্বি” বা “মৃত মানুষ” বলে আখ্যা দেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গাজার বিতরণ কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ, অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ১৭০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা জিএইচএফ-এর কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ এবং স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন, জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনী ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যারা খাদ্য সহায়তা নিতে এসেছিলেন।
এদিকে, ইসরায়েল দাবি করছে—জিএইচএফ-এর মাধ্যমে পরিচালিত এই বিতরণ কার্যক্রম হামাসকে সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে এবং সহায়তা সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হন। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫৭ হাজার ১৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা এখনো ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে রয়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও নিরাপত্তা চরমভাবে সীমিত হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থাগুলো।