
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
ইরানের ইসলামাবাদস্থ রাষ্ট্রদূত রেজা আমিরি মোগাদ্দাম বলেছেন, পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক এক হয়ে কাজ করলে কোনো বৈশ্বিক শক্তিই তাদের প্রতিরোধ করতে পারবে না। গত বুধবার (৯ জুলাই) সামা নিউজের ‘নাদিম মালিক লাইভ’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘ইহুদীবাদী শাসনব্যবস্থা ইরানের বিরুদ্ধে টানা ১২ দিনের আগ্রাসন চালিয়েছে। এই সময়ে পাকিস্তান সরকার ও জনগণ আমাদের প্রতি যে কূটনৈতিক সমর্থন দেখিয়েছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
মোগাদ্দাম জানান, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা আমাদের পাশে থেকেছেন। সিনেট ও জাতীয় পরিষদেও ইরানের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। ‘আমাদের পার্লামেন্টে ‘‘ধন্যবাদ পাকিস্তান’’ বলে স্লোগান উঠেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আমাদের শহীদদের জানাজায় ইরানের পতাকার পাশাপাশি পাকিস্তানের পতাকাও ছিল। ইরান ও পাকিস্তান যেন এক দেহের দুই আত্মা।’
ভূরাজনৈতিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরান, সৌদি আরব, তুরস্ক ও পাকিস্তান একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে—বিশেষ করে ইসরায়েলের আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েমের প্রচেষ্টা, যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দ্বারা সমর্থিত। মোগাদ্দামের ভাষ্য, ‘এই চার দেশ ঐক্যবদ্ধ হলে শক্তিশালী একটি জোট গঠন করা সম্ভব। পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক একত্র হলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না কোনো বৈশ্বিক শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের আছে পারমাণবিক অস্ত্র, ইরানের তেলসম্পদ, তুরস্কের শিল্পশক্তি এবং ইউরোপের দরজায় ভৌগোলিক অবস্থান। সৌদি আরবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত শক্তি। যদি চীন এই জোটে যোগ দেয়, তাহলে তা আরও প্রভাবশালী হবে।’
ইরান ও এসব দেশের মধ্যে বড় কোনো মতবিরোধ নেই বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাইনি। পাঁচ দফা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা প্রায় সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু ষষ্ঠ দফার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে ইসরায়েল চূড়ান্ত হামলা চালায়, যেখানে আমাদের সেনা কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও বেসামরিক লোকজন টার্গেট হয়।’
এর জবাবে ইরান মিসাইল হামলা চালায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের রাস্তাগুলো গাজার মতো হয়ে যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র কাতারের আমিরের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়। আমরা বলি, আগ্রাসন বন্ধ হলে তবেই আমরা থামবো।’
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক প্রযুক্তি শুধু স্থাপনাগুলোতে সীমাবদ্ধ নয়, তা আছে আমাদের বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে। এটি মুছে ফেলা যাবে না। সর্বোচ্চ যা করা সম্ভব, তা হলো আমাদের সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত করা।’
পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়েও রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ অঞ্চলটি পাহাড়ি ও দুর্গম। তবে ইরান-পাকিস্তানের স্বার্থ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগতিপূর্ণ। আমাদের উভয়ের শত্রুদের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র ও সুযোগ পাচ্ছে। তবুও নিরাপত্তা সহযোগিতা চলমান এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
সূত্র: সামা টিভি