
কুষ্টিয়া করেসপন্ডেন্ট।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বাবার বিরুদ্ধে ছেলেকে আহত করার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়।
মাথায় কাস্তে আটকে থাকা সেই আহত কিশোরের মাথা থেকে ২৬ ঘণ্টা পর অপারেশন করে কাস্তে বের করা হয়েছে। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বাবা শাহীন তার ছেলে রিফাদকে কাস্তে ছুড়ে মেরে আহত করেননি বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ধলনগর গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত রিফাদ আলী (১২) ধলনগর গ্রামের ক্যানেল পাড়ার শাহীন আলীর ছেলে। রিফাদ মাঠে গরুর ঘাস কাটে ও মাঝে মধ্যে ভাড়ায় ভ্যান চালায়।
পরিবার ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মাঠ থেকে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পড়ে গিয়ে হাতে থাকা কাস্তে তার মাথায় ঢুকে আটকে যায়। প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর অপারেশন করে তার মাথা থেকে কাস্তে বের করা হয়েছে। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে রিফাদ। অর্থের অভাবে পরবর্তী চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।
তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও পোস্টে দাবি করা হয়, ‘কুষ্টিয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় বাবা শাহীনের সঙ্গে ছেলে রিফাদের রাগারাগি! এক পর্যায়ে ছেলের দিকে কাস্তে ছুঁড়ে মারেন বাবা। মুহূর্তেই কাস্তেটি ছেলের মাথায় ঢুকে আটকে যায়।’ তবে এমন ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পরিবার। দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়ে সে আহত হয়েছে।
আহত রিফাদের খালু আব্দুল খালেক বলেন, “গরুকে খাওয়ানোর জন্য শুক্রবার সকালে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিল রিফাদ। ঘাস কাটা শেষে ঘাসের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। সেসময় কাদামাখা মেঠোপথে পা পিছলে পড়ে যায় সে। তখনই হাতে থাকা কাস্তে মাথায় ঢুকে আটকে যায়। সেসময় তাকে সাহায্য করার মতো কেউ মাঠে ছিল না। মাথায় কাস্তে নিয়েই সে সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে ফেরে।”
তিনি আরো বলেন, “এরপর দ্রুত তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা মাথা থেকে কাস্তে বের করতে পারেননি। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা অপারেশন করে কাস্তে বের করেছে। এরপর আরও দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। আগের চেয়ে এখন ভালো আছে রিফাদ। তবে এখনো কথা বলতে পারছে না।”
রিফাদের খালু বলেন, ‘‘রিফাদের পরিবার অত্যন্ত গরিব। টাকার অভাবে তারা ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছে না। খুব কষ্টের মধ্যে আছে। সবার সহযোগিতা পেলে ছেলেটির পরবর্তী চিকিৎসা হবে।”
রিফাদের চাচা শাকিল বলেন, “রিফাদ মাঠ থেকে ঘাসের বোঝা নিয়ে আইলের উপর দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বৃষ্টির কারণে মাঠের আইল কর্দমাক্ত ছিল। সেখানে পিছলে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে রিফাদের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ভাইরাল করা হয়েছে। এতে আমাদের মানসম্মানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা বড় বিপদে আছি। আমরা গরিব মানুষ। টাকার অভাবে চিকিৎসা ব্যয় চালাতে পারছি না। আমরা সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই।”
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিফাদের পাশে তার দাদা ও দাদি রয়েছেন। দাদা কোরবান আলী বলেন, “রিফাদকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিফাদকে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে অপারেশন করে মাথা থেকে কাস্তে বের করা হয়েছে। বর্তমানে কথা বলতে পারছে না। তবে হাত-পা নাড়াচাড়া করছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই। আমরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। এলাকার কয়েকজন মিলে কিছু টাকা তুলে দিয়েছে। এখন আমার কাছে ১০টা টাকাও নেই। সকাল থেকে আমি ও আমার স্ত্রী কিছুই খাইনি। সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, “বিষয়টি আমার নলেজে আসেনি। এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও জানাতে পারছি না। খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারব।”
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় হাসপাতাল আছে। এজন্য আমরা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে দুই ধরনের তথ্য জানা গেছে। কেউ কেউ পোস্ট করেছে যে, রাগ করে বাবা কাস্তে ছুঁড়ে মারে, সেটা মাথায় ঢুকে আটকে গেছে। আবার কেউ কেউ পোস্ট করেছে, পড়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।”