আক্তারুল ইসলাম, (মিরপুর) কুষ্টিয়া।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেশি নগর গ্রামের প্রধান কাঁচা রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। বর্ষা এলেই রাস্তাটি রূপ নেয় কাদা ও জলাবদ্ধতার এক ভয়াবহ চিত্রে, যা গ্রামের হাজারো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চরম ভোগান্তি তৈরি করছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর কাঁচা রাস্তা পাকা করার প্রতিশ্রুতি শুনে আসলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। বিশেষ করে বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। হাঁটু পর্যন্ত কাদা জমে যাওয়ায় স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগী ও সাধারণ মানুষ চলাচলে পড়েন দুর্বিষহ দুর্ভোগে।
বেশিনগরের স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই কাঁচা রাস্তা একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার সময় রাস্তাটি এতটাই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে যে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অনেক সময় বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারে না। কেউ কেউ পড়ে যায়, আবার অনেকে পেছনে পড়ে যাওয়ার ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এর ফলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে এবং শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এক অভিভাবকরা জানান, "আমার ছেলে প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। বর্ষাকালে তাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হয়। কাদা আর পানি দেখে ও অনেক সময় কাঁদতে শুরু করে।"
গ্রামে কোনো মানুষ অসুস্থ হলে, বিশেষ করে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে নেওয়া হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কাদা ও কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে কোনো রিকশা, ভ্যান তো দূরের কথা, হাঁটাও মুশকিল। ফলে অনেক সময় চিকিৎসা পেতে দেরি হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা আশিকুল ইসলাম বলেন, "একজন বয়স্ক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আমাদের চারজন মিলে মাচায় করে কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল। কল্পনাও করা যায় না, এমন কষ্ট এখনও করতে হয়।"
গ্রামের কৃষকরা জানান, এই রাস্তাটি দিয়েই তারা ফসল, সার, বীজ এবং অন্যান্য কৃষি সামগ্রী আনা-নেওয়া করেন। বর্ষার সময় রাস্তায় গর্ত আর কাদায় ট্রলি বা গরুর গাড়িও চালানো যায় না। এতে ফসল পরিবহনে দেরি হয়, উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা।
বেশি নগর, রামনগর ও নওদা কুর্শা—এই তিনটি গ্রামের জন্য একটি সম্মিলিত কবরস্থান রয়েছে, যার পাশ দিয়ে এই কাঁচা রাস্তা। বর্ষাকালে এই রাস্তায় এমন কাদা জমে যে, দাফনের সময় মৃতদেহ বহন করাও হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য কাজ। এতে ধর্মীয় কার্যক্রম ও সামাজিক শোকানুষ্ঠানও ব্যাহত হয়।
বেশি নগর গ্রামের বাসিন্দারা দাবি করছেন, স্থানীয় প্রশাসন যেন এই রাস্তাটি দ্রুত পাকা করার উদ্যোগ নেয়। বিশেষ করে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব নাজমুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গ্রামবাসীরা বলেছেন, ছাতিয়ান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গোরস্তান ফিল্ডের পাশ দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে, সেটি যেন জরুরি ভিত্তিতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা জানান, রাস্তা উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বরাদ্দের অপেক্ষা করা হচ্ছে।
তবে গ্রামবাসীর একটাই প্রশ্ন—"আর কত বর্ষা অপেক্ষা করব? কাঁচা রাস্তায় কাদা মাড়িয়ে আর কতদূর হাঁটব?"
এই প্রশ্নের উত্তর এখন সময় ও প্রশাসনের কাছে।