দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সফরের জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ— সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই সফর কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক গভীর কূটনৈতিক বার্তা বহন করছে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, তা নির্ধারণে এই সফর বড় একটি মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করেছেন, আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত এই তিন দেশ সফর করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সফরের আগে তিনি পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে শুক্রবার রোম যাবেন। আট বছর আগে যখন তিনি প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখনকার মধ্যপ্রাচ্য ছিল উত্তপ্ত, অস্থির এবং দ্বন্দ্বপূর্ণ। এবার তিনি দেখবেন এক পরিবর্তিত অঞ্চল—যেখানে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ প্রায় শেষের পথে এবং আইএস-এর দমন কার্যত সফল হয়েছে।
তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। সফরের সূচিতে ইসরায়েলের অনুপস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে। ইসরায়েল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজায় অবরোধ ও হামলা অব্যাহত রেখেছে, আর ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার ট্রাম্পের প্রস্তাব আরব দেশগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিনের পুনর্গঠন নিয়ে আরব লিগের পরিকল্পনা এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ—এসব বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হতে পারে এই সফরে। তাছাড়া, ট্রাম্প বরাবরই ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে এসেছেন, সেই অর্থনৈতিক দিকটিও আলোচনার অংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সফরের সময় যদি তেহরান-ওয়াশিংটন সংলাপ কোনোভাবে ভেস্তে যায়, তাহলে ট্রাম্প আবারও ইরানবিরোধী জোট গঠনের জন্য আরব দেশগুলোর সমর্থন চাইতে পারেন। সব মিলিয়ে, এই সফর শুধু অতীত দ্বন্দ্বের পুনরাবৃত্তি নয়—এটি নতুন সমঝোতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত অবস্থান পুনঃনির্ধারণের সুযোগও তৈরি করতে পারে। বিশ্ব এখন দেখছে, ট্রাম্প এই সফর দিয়ে কতটা ভারসাম্যপূর্ণ এবং প্রভাবশালী কূটনৈতিক বার্তা দিতে পারেন। তথ্যসূত্র : আরব নিউজ