 
     আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব তাঁদের শত্রুকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে গালি দিত। প্রতিপক্ষকে মুখের কথায় ঘায়েল করার জন্য গালিটি ছিল মোক্ষম অস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন নব্বই দশকের আগের স্মৃতিই ফিরিয়ে আনলেন।
নিউ ইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলেই আখ্যা দিলেন ট্রাম্প। প্রয়োজনে মামদানিকে আটক করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। মেয়র নির্বাচন চলতি বছরের নভেম্বরে। এরইমধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে অন্যদের পেছনে ফেলে মনোনয়ন পেয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী মামদানি। জনপ্রিয়তায় যেভাবে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে রিপাবলিকান প্রার্থীকে পেছনে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের পুরানো অস্ত্র কাজে আসবে কি? এখনই বলা যাচ্ছে না।
জোহরান মামদানির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে নয়। তাঁর জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। তাঁর বাবা-মাও জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক নন। তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক। তাঁর মা ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মীরা নায়ার। সাত বছর বয়সে উগান্ডা থেকে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান মামদানি। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ডেমোক্রেটিক পার্টির আস্থা অর্জন করে এখন তিনি লড়বেন নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র পদের জন্য। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মেয়র পদে তিনি জয়ী হলে নিউ ইয়র্ক তার ইতিহাসে প্রথমবারের মত একজন মুসলিম মেয়র পাবে।
এই মামদানিকেই সহ্য করতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার একটি কারণ তাঁর চোখে মামদানি অভিবাসী এবং অভিবাসী নিয়ে তাঁর মতের বিরুদ্ধে মামদানির অবস্থান। মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ অ্যাখা দিয়ে তাঁর প্রতিটি কাজ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আল জাজিরা এ তথ্য দিয়েছে।
সম্প্রতি অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) অভিবাসীদের আটক করে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযানে নেমেছে। যারই প্রেক্ষিতে লস এঞ্জেলসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
মামদানি আইস এর অভিযানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নিজ এলাকায় এ ধরণের অভিযানে বাধা দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। এরপরই ট্রাম্প ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, ‘যদি মামদানি আইসকে কাজ করতে বাধা দেয়, তাহলে আমরা তাঁকে আটক করব।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা কমিউনিস্ট চাই না। যদি তাই হয়, আমি আমার দেশের পক্ষে তাঁর ওপর নজরদারি করব।’ ফেডারেল সরকারের অর্থে নিউ ইয়র্ক সিটি চলে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘মেয়র নির্বাচিত হলে মামদানির প্রতিটি কাজ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে।’
ট্রাম্পের পাশাপাশি রিপাবলিকানরাও মামদানিকে কথা দিয়ে আক্রমণ করছে। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি অগলস অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে পাঠানো চিঠিতে মামদানির নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার দাবি তোলেন।
তবে ট্রাম্পসহ প্রতিপক্ষকে বেশ ঠান্ডা মাথায় সামলাচ্ছেন তরুণ মামদানি। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট আমাকে আটক করার হুমকি দিয়েছেন, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে নেওয়ার এমনকি দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কথাও বলেছেন। এজন্য নয় যে আমি কোনো আইন ভঙ্গ করেছি। আমি বলেছি আইসকে আমার শহরে সন্ত্রাসী কাজ করতে দেব না।’