
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, পিরোজপুর।
পিরোজপুর পৌরসভার ৯০ শতাংশ রাস্তাঘাট এখন সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। শহরের রাস্তা নিচু আর খানাখন্দকে ভরা থাকায় বর্ষা মৌসুমে জন দূর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। ফলে স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো এখন সাধারন মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে থাকায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষদের পড়তে হয় চরম দূর্ভোগে। পৌরসভা কতৃপক্ষের দৃষ্টি না থাকায় সাধারন মানুষ ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগের যেন শেষ নেই।
পিরোজপুরের প্রাণকেন্দ্র ডাকঘর সড়কের বেহাল দশা। এ অবস্থা যে শুধু এখানেই তা নয়। এ দুরাবস্থা পিরোজপুর পৌর এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ সড়কের। পিরোজপুর ১৮৬৫ সালে পৌরসভায় উন্নিত হয়। আর প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয় ১৯৯০ সালে। তাতে কি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এর অবকাঠামোগত বিশেষ করে রাস্তা ঘাটের উন্নতি ঘটেনি তেমন। মূল শহরের অধিকাংশ সড়কই ভাঙা, খানাখন্দে ভরা। মাঝে মাঝে সংস্কার করা হলেও নিম্নমানের উপকরণের কারণে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়না।
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী ২৯ দশমিক ৫ বর্গ কিলোমিটারের এই পৌরসভার প্রায় ৯০ শতাংশ সড়কই বর্তমানে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ৩৩০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ২০ কিলোমিটার পাকা এবং ৭০ কিলোমিটার মাটির রাস্তা। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই শহরের সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। যা শহরবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌরসভার মধ্যে পর্যাপ্ত ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি ও বন্যার পানি নামতে পারে না, ফলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
পৌর শহরের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, সোনালী ব্যাংক পিরোজপুরের প্রাণকেন্দ্র। সোনালী ব্যাংক রোড, ক্লাব রোড সহ কয়েকটি জায়গার বেহাল দশা। একটু বৃষ্টি পড়লেই পানি জমে যায়। পিরোজপুর শহরে আমরা যারা চলাচল করি তাদের অনেক সমস্যা হয়। বছরের পর বছর এটা বিরাজ করতেছে, আমরা এর সমাধান চাই। শহরের এরকম অবস্থা হলে সুন্দর দেখায় না। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন সুন্দর একটি রাস্তা হয় যেখানে জনগণের চলার পথে কোন ভোগান্তি থাকবে না।
পৌর শহরের বাসিন্দা হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী এখলাস উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের ভিতরে পিরোজপুর সবথেকে অবহেলিত। সাধারণ একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে যায়। নেই ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা খানা-খন্দে ভরা। মহিলারা রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারেনা, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে আসতে সমস্যা হয়। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব পিরোজপুরবাসীকে সুন্দর একটি রাস্তা উপহার দেওয়ার জন্য।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খালিদ আবু বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেশ কয়েকটি ব্যাংক রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ রয়েছে। মুসল্লিরা নামাজ পড়তে যাবে কিন্তু ড্রেনের সব পানি রাস্তায় জমে গিয়েছে। শহরের ড্রেনের ব্যবস্থা সব থেকে বেশি খারাপ। গত দুই তিন বছর ধরে রাস্তার কোন কাজই হয়নি। জোড়া তালি দিয়ে যা চলে তা না চলার মত। মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দিলেও বৃষ্টির পানিতে সব শেষ হয়ে যায়। রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরে থাকায় রিকশা গাড়িতে যারা চলাচল করে বিশেষ করে বয়স্করা মাজা কোমরে ব্যথা হয়ে যায়।
সচেতন নাগরিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই মনে হয় কোন এক গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করতেছি। স্কুলগামী বাচ্চাদের এই রাস্তা দিয়ে চলতে ফিরতে খুব কষ্ট হয়। বিগত বছরে কোন উন্নয়ন হয়নি ।
পিরোজপুর পৌর শহরে ২০ বছর ধরে রিক্সা চালায় মোস্তফা আকন, তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি এই শহরে কিন্তু এই শহরের রাস্তাঘাট একদম ভালো না কিছু কিছু রাস্তা আছে যেখানে রিক্সা নিয়ে গেলে অনেক ক্ষতি হয়। এ কারণে সেসব জায়গায় রিক্সা নিয়ে যাই না।
অন্য আর এক রিক্সা চালক হায়দার আলী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা চিটাগাং এর মত রাস্তাঘাট ভরে যায়। মানুষ ঠিকঠাক মত পায়ে হাঁটতে পারে না এমনকি রিক্সার মোটর ডুবে যায়। এমনকি রিক্সার স্পোক কেটে যায়, সারাতে ৩০ টাকা এর থেকেও বেশি খরচ হয়। একজন রিকশা চালক হিসেবে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি অতি দ্রুত এই রাস্তাগুলো সংস্কার করা দরকার ।
পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বনিক বলেন, পিরোজপুর পৌরসভা টি একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। এই পৌরসভায় ৩৩০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে যার অধিকাংশের অবস্থা খুব বেশি একটা ভালো না। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় এগুলো সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে বরাদ্দ পেলে অতি দ্রুত রাস্তাগুলো সংস্কার করে জনগণের চলার উপযোগী করা হবে।
শহরবাসীর অভিযোগ নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সংস্কার করা না হলে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে সড়কগুলো। তাই প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি ওয়ার্ড ভিত্তিক রাস্তা দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।