
কুষ্টিয়া অফিস ॥
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের আটিগ্রাম ধাপারিয়া ক্যানেল পাড়ার প্রধান সড়কটি এখন এলাকাবাসীর জন্য এক দুঃসহ যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এলেই রাস্তাটির করুণ দশা চরমে পৌঁছে যায়। সড়কে চলাচল তো দূরের কথা, হাঁটা পর্যন্ত দায় হয়ে পড়েছে। কাদা-পানিতে একাকার রাস্তাটি যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এই সড়কের পাশেই কয়েকশ পরিবার বসবাস করে, যার মধ্যে রয়েছেন শতবর্ষী বৃদ্ধ থেকে শুরু করে কোমলমতি শিশুরাও। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পায়ে কাদা লেগে বইখাতা ভিজে নষ্ট হওয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষজন, যাদের জন্য এই রাস্তা এক ভয়াবহ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ১০২ বছরের হাকিম উদ্দিন বলেন, “এই রাস্তা দিয়া তো এখন চলাই যায় না। আমার মত বুড়ো মানুষরে নিয়া কেউ হাসপাতালে নিতে পারবে না, কাঁধে কইরা নিতে হইবো।”
শুধু হাকিম উদ্দিন নয়, এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আটিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নিপা জানায়, “প্রতিদিন স্কুলে যেতে ভয় লাগে। কাদায় পা পিছলে পড়ে যাই। বই-খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় স্কুলে যেতে পারি না।”
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাহাফুজুর রহমান বলেন, “এই রাস্তাটি ছাতিয়ান ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক। ধাপারিয়া, আটিগ্রামসহ আশপাশের অন্তত ৮-১০টি গ্রামের মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করে। বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।”
বিগত কয়েক বছরে নানা আশ্বাস মিললেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে রাস্তার কিছু অংশে খোয়া ও মাটি ফেলা হয়েছিল, কিন্তু রেইন ড্রেনেজ বা পাকা করার কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে রাস্তার মাটি ধসে গিয়ে কাদায় পরিণত হয়, আর শুকনো মৌসুমে উড়তে থাকে ধুলার ঝড়।
একই এলাকার কৃষক আজিজ বলেন, “আমরা ফসল আনি এই রাস্তা দিয়া, কিন্তু এখন গরুর গাড়িতেও কাদা ডুইবা যায়। বাজারে নিতে পারি না ঠিকমতো। এটা তো শুধু একটা রাস্তা না, আমাদের জীবনের অংশ।”
এই দুরবস্থার কারণে এলাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জরুরি রোগী পরিবহন থেকে শুরু করে গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা—সব ক্ষেত্রেই ভোগান্তি বাড়ছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবারও জোর দাবি জানানো হয়েছে দ্রুত এই রাস্তাটি পাকা করার উদ্যোগ গ্রহণের।
ছাতিয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি আমার জানা আছে। আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছি উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।”
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী, বলনে এটি উন্নয়ন কাজের তালিকায় আছে। বরাদ্দ এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা হবে।”
অবশ্য এলাকাবাসীর বক্তব্য, প্রতি বছরই তারা একই ধরনের আশ্বাস পান, কিন্তু বাস্তবায়ন আর হয় না। ফলে এবার তারা দাবি জানাচ্ছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবেন।
এই রাস্তার দ্রুত সংস্কার ও পাকা করার মাধ্যমে জনদুর্ভোগ লাঘবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সক্রিয় হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। নয়তো এই দুর্ভোগ একসময় বড় দুর্ঘটনায় রূপ নিতে পারে, যার দায় কেউ এড়াতে পারবে না।