তুহিনের মোবাইলে লুকিয়ে থাকতে পারে হত্যার মূল রহস্য, সিসিটিভিতে অস্ত্রধারীরা স্পস্ট

Spread the love

খায়রুল আলম রফিক
বিশেষ প্রতিনিধি।

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা রুজু হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তবে মামলার তদন্তে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখনো অনুত্তরিত রয়ে গেছে, যা হত্যা রহস্যকে ঘনীভূত করছে।

পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত মুখ। কিন্তু এতোদিনেও তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল এক নারীকে কেন্দ্র করে—সেই নারীকে এখনো শনাক্ত কিংবা আটক করতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ ও ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এখনো উদ্ধার হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার সময় তিনি নিজের মোবাইলে ভিডিও করছিলেন এবং সেটি হত্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মোবাইলটি উদ্ধার হলে হয়তো হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল তথ্য উঠে আসত।

নিহত সাংবাদিক তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেট এলাকায় এক নারীকে কেন্দ্র করে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কয়েকজন যুবকের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাংবাদিক তুহিন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিলেন। বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন যুবক তাকে ধাওয়া করে চায়ের দোকান থেকে টেনে এনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। পুরো ঘটনাটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম বলেন, “তুহিনকে কেন হত্যা করা হলো, সেটা এখনো আমরা জানি না। তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বাদশা মিয়াকে হামলার সময় তুহিন তা ভিডিও করছিলেন। ভিডিও করার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিমসহ দু’জন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, “ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।”

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চাঁদাবাজির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কল গার্লের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের একটি চক্রের কার্যক্রম ভিডিও করায় সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক সমাজসহ সাধারণ মানুষ গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

সুত্র: বিডি ২৪ লাইভ


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *