কক্সবাজারে কাজে এসে নিখোঁজ ৬ রাজমিস্ত্রি, আতঙ্কে সিলেটের একটি গ্রাম

Spread the love

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের ছয়জন রাজমিস্ত্রি কাজের জন্য কক্সবাজারে এসে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। গত ছয় দিন ধরে তাদের কারো সাথেই পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক।

নিখোঁজরা হলেন- খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) এবং মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।

তারা গত ১৫ এপ্রিল জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন এবং ১৬ এপ্রিল কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ করেন। এরপর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ এবং তারা সবাই ‘নিরুদ্দেশ’।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে সর্বশেষ অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে পাওয়া গেছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, “বিষয়টি শুনেছি, তবে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ আনেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই আব্দুল বাছিত দুলাল জানান, “১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় এমাদ ফোন করে জানায় তারা কর্মস্থলে পৌঁছেছে। এরপর হঠাৎই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রথমে ভেবেছিলাম মোবাইল সমস্যা। কিন্তু পাঁচদিন পার হয়ে গেলেও কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।”

খালেদ হাসানের বাবা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সফর উদ্দিন বলেন, “ছেলে ৫–৬ মাস চট্টগ্রামে কাজ করে, মাঝে মাঝে বাড়ি আসে। কিন্তু এবার কক্সবাজারে গিয়ে আর ফেরেনি। ছেলের মা এখনো কাঁদছে, এক মুহূর্ত শান্ত করতে পারছি না।”

রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে যে ঠিকাদারের মাধ্যমে ওরা গিয়েছে, সে-ই কোনো ফাঁদে ফেলেছে। যদি জিম্মি করা হতো, তাহলে তো অন্তত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করত।”

পরিবার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের এক ঠিকাদারের মাধ্যমে কক্সবাজারে এসেছিলেন তারা। ঠিকাদারের নাম জানা গেলেও বিস্তারিত পরিচয় বা বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি। সেই ঠিকাদার ও তার সহযোগী বাবুল- দুজনের মোবাইল নম্বরও এখন বন্ধ।

জানা গেছে, নিখোঁজ ছয়জনের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে পূর্বে কাজের সূত্রে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ছিল, কিন্তু বাকিরা এবারই প্রথম এই পথে আসেন। জকিগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ কক্সবাজারে যোগাযোগ করতে বলেন।

জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “আমরা পরিবারকে সহায়তা করছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অপরদিকে, কক্সবাজারে এসে পরিবারের সদস্যরা এখন নিখোঁজদের খোঁজে ছুটছেন এক থানা থেকে আরেক থানায়। এই নিখোঁজ ঘটনা টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চলের সাম্প্রতিক অপহরণ চক্র, মানব পাচার এবং শ্রমিকদের কাজে এনে নিপাত করার অভিযোগগুলোর সাথে সম্পৃক্ত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, “কক্সবাজারের শ্রমবাজারে বহিরাগত রাজমিস্ত্রি বা দিনমজুরদের গায়েব হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এর পেছনে একাধিক চক্র সক্রিয়, যাদের কেউ-কেউ ভুয়া কাজের কথা বলে এনে পাচার বা জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে।”

নিখোঁজ ছয়জন শ্রমিক জীবিত না মৃত- তা নিয়ে এখন পরিবারগুলোর দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কেউ জিম্মি করে রাখলে তার কোনো বার্তা নেই, আবার দুর্ঘটনা হলেও এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনা কেবল একটি গ্রাম নয়, দেশের শ্রমজীবী মানুষদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *