
সম্পাদক দৈনিক জনতার কথা!
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তরুণ পারভেজের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা সমগ্র জাতিকে হতবাক ও গভীর শোকাহত করেছে। এই মৃত্যু কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা নয়; এটি ছিল নৃশংস, অমানবিক এবং প্রগাঢ় অন্যায়ের প্রতিচ্ছবি। সমাজে সহিংসতা যখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে—আমরা কি এক বিবেকহীন সমাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছি?
পারভেজ ছিলেন স্বপ্নবান, প্রাণোচ্ছল এক তরুণ। তাঁর চোখে ছিল আগামী দিনের স্বপ্ন, হৃদয়ে ছিল পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। কিন্তু সেই স্বপ্ন মাঝপথে থেমে গেল একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে। একটি অজানা শত্রুতা, ক্ষমতার দম্ভ, কিংবা প্রতিহিংসার ভয়াবহ রূপ—সব মিলিয়ে তাঁর জীবন কেড়ে নেওয়া হলো এমন এক পন্থায়, যা সভ্য সমাজে অকল্পনীয়।
পারভেজের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের শোকগাথা নয়; এটি গোটা সমাজের ওপর নিক্ষিপ্ত এক নির্মম প্রশ্নবাণ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা—সবকিছু নিয়েই জনমনে প্রশ্ন জাগে। অপরাধীরা কি দ্রুত গ্রেফতার হয়েছে? তদন্ত কতদূর এগিয়েছে? বিচার কি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে? এই প্রশ্নগুলো আজ কেবল পারভেজের পরিবার নয়, দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষের মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। মানুষ তাদের ক্ষোভ, দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু ভার্চুয়াল প্রতিবাদের বাইরে গিয়ে সমাজ হিসেবে আমরা কতটা সোচ্চার? কেবল শোক প্রকাশ নয়, প্রয়োজন কার্যকর পরিবর্তনের আহ্বান।
পারভেজের মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—মানবিকতা আজ মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে। আমাদের সমাজে প্রতিদিনই যে অপরাধ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তা যেন সহনীয় হয়ে উঠেছে। বিচারহীনতা ও অনিরাপত্তার সংস্কৃতি ধীরে ধীরে আমাদের মূল্যবোধকে গিলে খাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, আমাদের করণীয় হলো:
আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা
বিচার ব্যবস্থাকে দ্রুত, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করা
মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জোরদার করা
সাংবাদিকতা ও নাগরিক সমাজকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দেওয়া
পারভেজ আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর মৃত্যু যেন বৃথা না যায়, সেটিই হোক আমাদের শপথ। এই মৃত্যু হোক সমাজ পরিবর্তনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। হোক এটি আমাদের অবচেতন বিবেককে জাগ্রত করার দৃপ্ত আহ্বান।
আমরা আশা করি, অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে এবং পারভেজের পরিবার পাবে ন্যায়বিচার। একই সঙ্গে, সমাজ হিসেবে আমরা যেন এমন ঘটনা আর না দেখতে পাই—এই প্রতিশ্রুতি নেওয়ার এখনই সময়।