
জনতারকথা ডেস্ক:
মুরগির দাম না বাড়লেও গ্রীষ্মতাপের অজুহাতে দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। আগে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় স্থির হয়ে আছে।
সেঞ্চুরির ওপরে বেগুন, শজনে ডাঁটা, কাঁকরোল, ঝিঙে। পেঁপেসহ অন্যান্য সবজির কেজিও ৮০ টাকায় ঠেকেছে। ধান উঠতে শুরু করলেও এক পয়সাও কমেনি চালের দাম। আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর টাউন হল বাজার, শ্যামলী বাজার, কারওয়ান বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বাজারভেদে সবজির কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম-বেশি দেখা গেছে।
চড়ছেই ডিমের দাম
গত সপ্তাহে বিভিন্ন বাজারে ১২৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা ডজন দরে ডিম বিক্রি হয়েছে। এর পর তা আর কমছে না। বরং দুই দিনের ব্যবধানে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় ঠেকেছে। ফলে ভোক্তাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে ডিম।
টাউন হল বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. সোহেল এবং শ্যামলী বাজারের মাহবুব হোসেন বলেন, আগের চেয়ে সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দুই দিন ধরে দাম বাড়ছে। ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। সোহেল বলেন, ‘আড়তে দাম বাড়তি। কয়েক দিন আগে ১০০ ডিম ৯৬০ টাকায় কিনেছি। সেখানে এখন দুই দিন ধরে ১০০ ডিম ৯৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিছু লাভ তো করতে হবে। এ জন্য বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাড়ছে এই ডিমের দাম।’
তেজগাঁও আড়তে খোঁজ নিলে নিলিমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জুবায়ের বলেন, খরায় অনেক খামারের মুরগি কমে গেছে। আগের চেয়ে আড়তে ডিমের সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য বাড়ছে দাম। সরবরাহ না বাড়লে দামও বাড়তে থাকবে। এই আড়তের হানিফ মিয়াসহ অন্য আড়ত থেকেও একই তথ্য পাওয়া গেল। তবে মুরগির দাম স্থিতিশীল আছে। গত সপ্তাহের মতোই ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বিল্লাল হোসেন এবং কারওয়ান বাজারের চায়না-বাংলা চিকেন হাউসের ফয়েজ আহমেদসহ অন্যরা বলেন, ‘খামারের দামের ওপর বাজারের দাম নির্ভর করে। তারা কম রাখলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি।’ আগের মতোই ব্রয়লার ১৭০-১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম কমে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল ও নিউ মার্কেটসহ অন্য বাজারেও এই দরে মুরগি বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। আগের মতো দেশি মুরগিও ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই আকারভেদে রুই, কাতল মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সেঞ্চুরির ওপরে বেগুনসহ চার সবজি
সবুজ বেগুনের দাম কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং তাল বেগুনের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। শজনে ডাঁটাও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, ঝিঙে ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আগের সপ্তাহের মতো অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার কমে মিলছে না। ধুন্দলও ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ৮০, বাঁধাকপি ৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। শসা ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০, করলা ৭০ থেকে ৮০, পটোল ও ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৮০, কাঁচা পেঁপে ৮০, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি এবং লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শ্যামলী বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সৈকত আলী বলেন, ‘কী কারণে সবজির দাম বেড়েছে জানি না। তবে বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’
এক পয়সাও কমেনি চালের দাম
হাওরসহ বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান উঠলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই বেশি দামে মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৯৬ টাকা কেজি; রশিদ, সাগরসহ অন্য মিনিকেট ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি; আটাশ ৬০ থেকে ৬৫ এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার পর সয়াবিন তেলের বাজার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা ১ লিটার ১৮৯ টাকা ও ৫ লিটার ৯২০ টাকায় বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ২ কেজির প্যাকেট আটা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চিনি ১২০, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের বাজার বেড়ে স্থির
ভরা মৌসুমে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এ সপ্তাহেও ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। টাউন হল বাজারের রমজান আলী খবরের কাগজকে বলেন, ভালো পেঁয়াজ এখনো ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ফরিদপুরের পেঁয়াজ একটু কম ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আগের মতোই আলুর কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি আদা ১২০ থেকে ১৩০, আমদানি করা আদা ১৮০ থেকে ২২০, দেশি রসুন ১২০, আমদানি করা রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সূত্র-খবরের কাগজ