বানের পানিতে ভেসে গেলো ঘর

Spread the love

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের কেন্দুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বড়দল পুরানহাটি গ্রামের চার শ্রমজীবীর পরিবারের ৩৪ নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর ও কিশোরী অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। পানির স্রোত কমলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৩৪ জন স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও ১৬ জন শিশু অসহায় অবস্থায় রয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বড়দল ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য জুয়েল আহমদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঈদের বিশেষ খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রতিটি পরিবারের জন্য ২০ কেজি করে মোট ৮০ কেজি চাল দিয়ে সহায়তা করেছেন।

ভুক্তভোগী নূরুন নেছা বিবি (৭৫) জানান, গতবার তার ছেলে আফলাকুল ঢাকার পোশাক কারখানায় কাজ করে তিন লাখ টাকা খরচ করে টিনশেডের ঘরটি তৈরি করে। এ বছরের পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে পুরো ঘর পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায়।

আরেক ভুক্তভোগী নাসিমা বেগম (৩৫) জানান, দুই লাখ টাকা খরচ করে ঘর তৈরি করেছিলেন তারা। কিন্তু ঘরে দুই বছরও থাকা হয়নি। কয়েকদিন পর ঈদ। ঈদে কোনও আয়োজন নেই তাদের পারিবারে।

বড় দল দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র নুরুল মুত্তাকিন জানান, তাদের থাকার ঘর পানিতে ভেসে যাওয়ায় তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

একই মাদ্রাসার ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে সাহায্য সহায়তা না পেলে তার বাবা আবার ঘর তৈরি করতে পারবেন না। হঠাৎ ঘর ভেসে যাওয়ায় তারা এখন গৃহহীন অবস্থায় আছে।

আফলাকুল বলেন, সপরিবারে ঢাকার পোশাক কারখানায় কাজ করে তিল তিল করে টাকা সঞ্চয় করে ঘর বানিয়েছিলেন। শ্রমঘামের টাকার ঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। এখন তিনি শ্বশুর বাড়িতে আছেন।

মাসুক মিয়া বলেন বলেন, তিনি ঢাকায় ছিলেন। ঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে বাড়ি এসেছেন। এসে দেখন ঘর আসবাবপত্র কোনও কিছু নেই, সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

ইউপি সদস্য সামায়ুন কবীর জানান, ঘর ভেসে যাওয়ার সময় আফলাকুল ও জসিম উদ্দিন বাড়ি ছিল না। তারা ঢাকায় পোশাক কারখানায় ছিল। রাতে গ্রামবাসী কিছু কাপড়চোপড় ও আসবাবপত্র উদ্ধার করতে পারলেও পুরো ঘর মুহূর্তের মধ্যে ভেসে গেছে। এখন সবাই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার আশা ছিল, ছুটিতে বাড়ি এসে ঈদ করবেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন তাদের ঘর ভেসে যাওয়ার খবর দিলে তারা বাড়ি এসে দেখেন, ঘর আসবাবপত্র সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বানের পানি।

উল্লেখ্য, ৩০ মে রাত সাড়ে ১০টায় বড় দল পুরান হাটি ও নতুন হাটির মাঝের খাল অংশে কেন্দুয়া নদীর বেড়িবাঁধ পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যায়। দুটি পরিবারের সদস্যরা ঢাকার পোশাক কারখানায় কাজে ছিলেন। তাদের কিছু কাপড়চোপড় আসবাবপত্র গ্রামবাসী উদ্ধার করেন। কিন্তু বসত ঘর রক্ষা করতে পারেননি।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের ঈদ ভালো করে উদযাপন করতে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। এদিকে উজানের ঢলে পানি বাড়লেও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এদিকে গতকাল শাল্লা উপজেলা ভেড়াডহর হাওরের প্রতাপপুর অস্থায়ী বেড়িবাঁধ ভেঙে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশ করলেও ফসল ও মানুষের কোনও ক্ষতি হয়নি। চারটি পরিবারের ছয় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *