
নিউজ ডেস্ক, জনতারকথা
বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীরা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের জাতীয় অপরাধ সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাংলাদেশের পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানোর পথ সুগম হচ্ছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দুদক চেয়ারম্যানের সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরে এনসিএ কর্তৃপক্ষের বৈঠকে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। আলোচনার প্রেক্ষিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দের ঘোষণা দেয় এনসিএ। এটি এনসিএর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সম্পদ জব্দের ঘটনা হিসবে বর্ণনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও সম্পদ জব্দের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ঈদের টানা ছুটির পর রবিবার প্রথম কর্মদিবসে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় পারস্পারিক আইনগত সহায়তা নিয়ে এনসিএর সঙ্গে একটি মাত্র বৈঠক হয়েছে। এনসিএর সঙ্গে সে দেশের আরও কিছু সংস্থা যুক্ত রয়েছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পারস্পারিক সহায়তার ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
সূত্র জানিয়েছে, দুদক এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে দুর্নীতিপরায়ণদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে কোনো পাচারকারী প্রকৃতভাবে কী পরিমাণ টাকা পাচার করেছে এবং সেই টাকায় বিদেশে কী পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছে তার পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ সংগ্রহ করা অনেকটা কষ্টকর। এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহযোগিতা করলে সেই সব তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে এবং আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করাও অন্তত সূদৃঢ় হবে। এ ক্ষেত্রে এনসিএ সহযোগিতা করলে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া সহজ হবে। একইভাবে পারস্পারিক সহায়তায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করাও সম্ভব হবে।
বিশেষ করে এনসিএ সেই দেশে পাচার হওয়া অর্থ-সম্পদ জব্দ করলে পরবর্তী সময়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনার সম্ভাবনা নিশ্চিত হতে পারে। কারণ পাচারের টাকায় গড়ে তোলা সম্পদ বিক্রি করে ফের অন্য দেশে পাচার করা হলে আইনগত প্রক্রিয়ায় কিছুটা ঘাটতি তৈরি হতে পারে। সে জন্য পাচারের টাকায় গড়ে তোলা সম্পদ জব্দ হওয়া খুব জরুরি। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ তিনজনের সম্পদ জব্দ করায় সেগুলো ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সব দেশের সঙ্গে পারস্পারিক আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করা হলে পাচারের টাকা যেমন ফেরানো সম্ভব হবে, তেমনি ভবিষ্যতে পাচারের প্রবণতাও কমে যাবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে অন্তত ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
গত বছর দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের তদন্তেও ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনরা যুক্তরাজ্যে অন্তত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি কিনেছেন বলে তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের এনসিএ গত ১২ জুন পর্যন্ত সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ৩ জনের মোট ২৬০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে অন্তত ৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত বা অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বেক্সিমকো গ্রুপ পরিবারের দুই সদস্য ও বসুন্ধরা গ্রুপ পরিবারের এক সদস্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।