
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা।
সবকিছু রেডি শুধু সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য ঝুলে রয়েছে রংপুর ও নীলফামারীতে গ্যাস সরবরাহ। রংপুর, পীরগঞ্জ ও সৈয়দপুরে বিতরণ পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে জুনে, আর সঞ্চালন পাইপের কাজ শেষ হয়েছে আরও দেড় বছর আগেই।
ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস সরবরাহ কর্মসূচি সফল হয়েছে। রংপুরবাসী মনে করে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে শিল্পায়নের পালে হাওয়া লাগবে, এতে ঘুচে যাবে রংপুরে কর্মসংস্থানের অভাব। কিন্তু পাইপলাইন হলেও গ্যাস সরবরাহের কোন দিনক্ষণ বলতে পারছেন না খোদ জ্বালানি উপদেষ্টাও।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবীর খান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, রংপুরে গ্যাস সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট করে তারিখ বলা সম্ভব না। বর্তমানে যে অবস্থা সরবরাহ শুরু করা হলেও তারা (রংপুর) গ্যাস পাবে না, কারণ গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। আমরা চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি, সরবরাহ বাড়ানো গেলে রংপুরে গ্যাস দেওয় হবে। তবে তা হবে শুধু শিল্পের জন্য, আমরা আবাসিকে কোন গ্যাস দেবো না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা এখন দু’টি উৎস থেকে গ্যাস পাচ্ছি। একটি হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের ফিল্ডগুলো থেকে, আরেকটি উৎস হচ্ছে আমদানি যা চট্টগ্রাম দিয়ে আসছে। গ্যাস পাইপে ছাড়ার পর শুরুর দিককার গ্রাহকরা পেয়ে থাকেন, নিচের দিকের গ্রাহকরা পান না। রংপুর নিচের দিকে অবস্থিত হওয়ার সরবরাহ না বাড়লে রংপুর গ্যাস পাবে না।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমাদের দিকে থেকে সবকিছু রেডি। এখন সরকারের নীতি সিদ্ধান্তের বিষয়। সিদ্ধান্ত পেলেই গ্যাস সরবরাহ করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা নিজেরাও চাই দ্রুত সরবরাাহ শুরু করতে, কারণ পাইপলাইন রেডি, এখানে সরবরাহ করা না হলে আয় বাড়বে না। এ নিয়ে অনেক মিটিং হচ্ছে, তবে গ্যাস ক্রাইসিস রয়েছে সে দিকটিও দেখতে হচ্ছে সরকারকে।
বর্তমানে বগুড়া জেলা শহর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ চালু রয়েছে, যা বিগত বিএনপি সরকারের সময় থেকে বিদ্যমান। এরপর বহুল কাঙ্খিত উত্তরের গ্যাস সরবরাহের সঞ্চালন ও বিতরণ নামে পৃথক দু’টি প্রকল্প নেওয়া হয়। একটি হচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর সঞ্চালন পাইপ। ওই প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। করোনাসহ নানা কারণে ৩ দফায় সময় পিছিয়ে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়।
অন্যদিকে বিতরণের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প নেয় পিজিসিএল। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে রংপুর শহরে ৪৪ কিলোমিটার, পীরগঞ্জে ১০ কিলোমিটার এবং নীলফামারী ও উত্তরা ইডিজেড এলাকায় ৪৬ কিলোমিটার বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ।
পিজিসিএল এর রংপুর, নীলফামারী ও পীরগঞ্জ শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমাদের কাজ গত জুন শেষ হয়েছে। এখন চাইলেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া সম্ভব।
শিল্প কারখানার অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক। যে অঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ যতো আগে নিশ্চিত হয়েছে সেই অঞ্চলে শিল্প ততো এগিয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পের প্রসার নেই বললেই চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করেন গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই তারা রংপুর অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে সাহস দেখান নি।
এমনকি ইকোনমিক জোন এবং বিসিক শিল্প নগরীগুলোও অনেকটা বেকার পড়ে রয়েছে। এতে বিশাল অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ পেলে রংপুর অঞ্চলেও শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। চাপ কমে আসবে রাজধানী ঢাকার উপর। সে কারণে আশায় বুক বেঁধে আছে রংপুর অঞ্চলের বাসিন্দারা। পাইপ লাইন হলেও সংকট পুরোপুরি কাটছে না উত্তর জনপদের। এখন সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া অঞ্চলে তেমন গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় না। আরও দেড়’শ কিলোমিটার দূরে উত্তরা ইপিজেডে গ্যাস পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিশ্রুত (অনুমোদিত) গ্রাহকদের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৫৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর প্রকৃত চাহিদা ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট বিবেচনা করা হয়। যার বিপরীতে দেশীয় উৎস থেকে ১৮০০ মিলিয়ন এবং আমদানিসহ ২৮০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। মজুদ কমে আসার প্রতিদিনেই কমে আসছে দেশীয় উৎপাদন। অন্যদিকে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা ৪৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। চাইলেই আমদানি বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই, অনেক যদি কিন্তু এবং সময়ের বিষয় রয়েছে।