
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, সম্মান ও পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফিরতে প্রস্তুত তেহরান। তবে তার আগে ওয়াশিংটনকে তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আলোচনার সময় আর কোনো সামরিক হামলা চালানো হবে না— এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ফরাসি দৈনিক লে মনডে-তে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে আরাকচি আরও বলেন, ‘কূটনীতি একমুখী পথ নয়। যুক্তরাষ্ট্রই আলোচনার টেবিল ছেড়ে সামরিক আগ্রাসনের পথে গেছে। এখন তাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।’
তিনি জানান, কূটনৈতিক যোগাযোগ সব সময়ই চলমান ছিল এবং বর্তমানে কিছু ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে একটি ‘ডিপ্লোম্যাটিক হটলাইন’ গঠনের কাজ চলছে।
আরাকচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পর দেশটির ক্ষতিপূরণ চাওয়ার অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শুধু একটিমাত্র প্রোগ্রাম ধ্বংস করে একটি জাতিকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগে বাধ্য করা— এটা এক গুরুতর ভুল বিশ্লেষণ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা জ্বালানি, চিকিৎসা, কৃষি ও উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে কাজ করছিলাম।’
আরাকচি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পর্যবেক্ষণে পরিচালিত হয় এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। সেই প্রোগ্রামে কোনো অস্ত্রায়নের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি, যা আইএইএ বারবার নিশ্চিত করেছে।
‘এই হামলা শুধু স্থাপনায় নয়— এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তির (এনপিটি) মূল ভিত্তির ওপর আঘাত,’ তিনি বলেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয় বা সামরিক হুমকি অব্যাহত রাখে, তাহলে যেকোনো সম্ভাব্য আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির আওতায় ইউরোপের তিন দেশ (ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি) “স্যাংশন মেকানিজম’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছে— এ নিয়ে আরাকচি বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ বাস্তবিক অর্থে একটি সামরিক আক্রমণের সমতুল্য এবং তা ইউরোপের আলোচনায় ভূমিকা ‘নিশ্চিহ্ন’ করবে।”
আরাকচি জানান, ১৩ জুন ইসরায়েল একটি ‘নিঃসন্দেহে আগ্রাসী ও উসকানিমূলক হামলা’ চালায়, যাতে ইরানের বহু উচ্চপর্যায়ের সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন।
এরপর ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে এই আগ্রাসনে যোগ দেয় এবং জাতিসংঘ সনদ ও এনপিটি লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
২৪ জুন, আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া ইসরায়েল একতরফাভাবে হামলা বন্ধ ঘোষণা করে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে প্রকাশ্যে জানানো হয়।
সূত্র: প্রেস টিভি