
লক্ষ্মীপুর, করেসপন্ডেন্ট।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তরজয়পুর চৌপল্লী এলাকার কাশারী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে একসঙ্গে পাশাপাশি ৬টি কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। এখানে দাফন করা হবে সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের নারী শিশুসহ ৭ জনের মধ্যে ৬ জনের মরদেহ। বিকেলে জানাজা শেষে তাদের দাফন সম্পন্ন হবে।
এরা হলেন প্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া আক্তার (৮) ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫)।
এর মধ্যে বাহারের শাশুড়িফয়জুন নেছা (৭০) কে পার্শ্ববর্তী হাজিরপাড়া এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
একই কবরস্থানে পাশাপাশি ৬ টি কবর খোঁড়াটাই যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। প্রতেবেশীসহ দূর দূরান্ত থেকে আগতরা বাড়িতে ঢুকার পথেই রাস্তার পাশে ওই কবরস্থানের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়।
সাইফ উদ্দিন নামের একজন বলেন, এ এক মর্মস্পর্শী দৃশ্য। একসঙ্গে ৬টি কবর। পাশাপাশি দাফন করা হবে ৬ জনকে। কোনভাবেই মনকে স্থির করতে পারছি না।
কবর খোঁড়ার কাজ করছেন ৪৫ বছর বয়সী মো. সুমন হোসেন। তিনি ১৫ বছর বয়স থেকে কবর খোঁড়ার কাজ করছেন। স্থানীয় পাঁচপাড়া ক্লাবের সদস্য তিনি। এই ক্লাবের ১৫ জন সদস্য আজ কাশারী বাড়িতে এসেছেন কবর খুঁড়তে।
সুমন হোসেন বলেন, ১৫ বছর বয়স থেকে কবর খুঁড়তাছি। কখনও এতগুলো কবর একসঙ্গে খুঁড়িনি। কাউকে কখনও খুঁড়তেও দেখিনি। শুনেছি যুদ্ধের সময় এত মানুষের কবর একসঙ্গে হয়েছে। জীবনে প্রথম এমন দৃশ্যের স্বাক্ষী হলাম।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলে এমন ঘটনা ঘটে। একই পরিবারের ৭ জন একসঙ্গে মারা যায়।
তিনি বলেন, প্রবাসী বাহারের শাশুড়ি ছাড়া বাকি ৬ জনের মরদেহ কাশারী বাড়ির কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হবে। তার শাশুড়ি হাজিরপাড়া শ্বশুরদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বেঁচে ফেরা প্রবাসী বাহার উদ্দিন, আব্দুর রহিম জানায়, ঘুম চোখে নিয়ে মাইক্রোবাস চালাচ্ছিল চালক রাসেল। বার বার বলা শর্তেও গাড়ি থামিয়ে সামান্যও বিশ্রাম নেননি তিনি। এর আগে কুমিল্লায় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে আসে। কিন্তু বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার আগেই ঘুমন্ত চালক গাড়িটি সড়কের পাশে খালে ফেলে দেয়। গাড়ি তাৎক্ষণিক ডুবেনি, ধীরে ধীরে ডুবছিল। তখন চালককে গাড়ির লক খুলতে বললেও খুলে দেয়নি। তবে সে নিজে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যায়। কাউকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেনি।
একপর্যায়ে গাড়ি থেকে প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মীর্জা, ভাবি সুইটি ও শ্যালক রিয়াজ বের হয়ে আসে। তবে বাঁচতে পারেনি বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া আক্তার (৮) ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫)।
সড়কে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
উল্লেখ্য, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন প্রবাসী বাহার উদ্দিন। তাকে আনতে পরিবারে ১১ সদস্য মাইক্রোবাসযোগে রাজধানীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস খালে পড়ে পরিবারটির ৭ সদস্য মারা যায়। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। স্বজনদের অনেককেই কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।