
আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাতের প্রভাবে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে শাকসবজি ও মাছের দাম। সরবরাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে ক্রেতার চাপ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা।
১০ আগস্ট রবিবার মিরপুর পৌর বাজার প্রধান পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি মাছের দামেও দেখা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি।
শুধু মিরপুর পৌর বাজারেই নয়—উপজেলার চিথলিয়া, হালসা, পোড়াদহ, আমলা, নিমতলা, ,তালবাড়িয়া, মশানসহ প্রায় সব কটি বাজারেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। সব জায়গাতেই শাকসবজি ও মাছের দাম বেড়ে গেছে এবং সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে।
পাইকারি বাজারের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে করল্লা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পটল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা—যেখানে আগের দরে তা ছিল যথাক্রমে ৪০ ও ৭০ টাকা। এছাড়া লাল শাক ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, লাউ ৪০ টাকা, কচু ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং রসুন ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা মিরপুর বাজারের আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, গত একমাস ধরে টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফুল-ফল ঝরে পড়ছে, শাক-সবজির উৎপাদন কমেছে। আবার যেসব ফসল বাজারে এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ কারণেই দাম বেড়ে গেছে।
আমলা বাজারের ব্যবসায়ী আশাদুল হক বলেন, বৃষ্টির কারণে গ্রাম থেকে সবজি তুলতে সমস্যা হচ্ছে। পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় পাইকারি বাজারে পণ্য কম আসছে। তার ওপর আজ সপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় ক্রেতা বেশি—এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে ফেলছে।
সবজি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারেও। খুচরা পর্যায়ে প্রায় প্রতিটি জাতের মাছের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষ করে রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাশ, টেংরা, শিং, কৈ প্রভৃতি মাছের ক্ষেত্রে এই দাম বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
মাছ বিক্রেতা গাফফার জানান, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অনেক খামার থেকে মাছ ধরতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া নদী-খালেও পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা কম মাছ ধরতে পারছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই দাম বাড়াতে হচ্ছে।
দামবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ ক্রেতারা। বাজারে আসা গৃহিণী রাবেয়া খাতুন বলেন, এক ব্যাগ বাজার করতেই এখন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা লাগে, অথচ কয়েক দিন আগেও তা ৪০০ টাকায় হয়ে যেত। আমরা এখন মাছ তো দূরের কথা, ভালোভাবে শাকসবজিও কিনতে পারি না।
বাজারে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে।
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শামসুল আলম বলেন, টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে ফুলের গাছে পানি জমে অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আবার শাকসবজি পানি জমা জমিতে পচে যাচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
সবজি ও মাছের এই মূল্যবৃদ্ধি স্বল্পমেয়াদী হলেও সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে উঠেছে বড় চাপ। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেকসই কৃষিনীতির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেন খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত না হয়—সেজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাজার ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ।