কুষ্টিয়ার মিরপুরে সাংবাদিক ফিরোজ আহম্মেদকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংস হামলা ঈগল চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি

Spread the love

কুষ্টিয়া অফিস।

কুষ্টিয়ার মিরপুর প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আলো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফিরোজ আহম্মেদকে (৬৪) হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বুধবার (১৩ আগস্ট ২০২৫) মিরপুর বাজারের ঈগল চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা সাংবাদিক ফিরোজ আহম্মেদের ওপর হামলাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা’ আখ্যা দিয়ে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বক্তারা বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর বারবার হামলা হচ্ছে, কিন্তু অপরাধীরা শাস্তি পায় না। এর ফলে দুষ্কৃতিকারীরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে।”

গুরুতর আহত ফিরোজ আহম্মেদ ঢাকায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বর্তমানে ফিরোজ আহম্মেদ- ঢাকার মহম্মদপুরের ট্রমা সেন্টার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথার বাম পাশের পিছনের অংশের হাড় ভেঙে এর কুচি অংশ ব্রেনের রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করছে। এছাড়া বাম পাশের পাঁজরের তিনটি হাড় ভেঙে এর ধ্বংসাবশেষ ফুসফুসের আংশিক কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। একই সাথে বাম হাঁটুর হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

চিকিৎসক আরও জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত না হলে রোগীর অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক ফিরোজ আহম্মেদ। পথে মিরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্টরপাড়ায় যুবলীগের দৌলতপুর উপজেলা শাখার সদস্য মিলন হোসাইন ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাকে ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলার সময় ফিরোজ আহম্মেদ হামলাকারীদের অনুরোধ করে বলেন, “ভাই, আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছি, আমাকে মারবেন না।” কিন্তু তার এ আকুতি উপেক্ষা করে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে যায়। পরে তিনি যখন অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, তখন হামলাকারীরা ‘ডেথ ডেথ’ বলে স্থান ত্যাগ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মিলন হোসাইন দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের বাজুডাঙ্গা গ্রামের মো. আফসারের ছেলে। এলাকাবাসীর দাবি, তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে একটি সন্ত্রাসী চক্র এলাকায় চাঁদাবাজি, ভীতি প্রদর্শন ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

প্রতিবাদে উত্তাল মিরপুর, হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মিরপুরে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। বুধবার বিকেলে ঈগল চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শত শত মানুষ অংশ নেন। এতে প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ক্লাব সভাপতি মানববন্ধনে বলেন, এটি শুধু একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা নয়—এটি বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর বর্বরোচিত আঘাত। তিনি হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
প্রশাসনের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা- সমাবেশে বক্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তারা অভিযোগ করেন, অপরাধীরা রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে মিরপুরের শান্তিপ্রিয় মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ঘটনার পর কুষ্টিয়া জেলা ও আশপাশের উপজেলার সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে প্রেস ক্লাবে জরুরি সভা করেন। সভা থেকে একযোগে ঘোষণা দেওয়া হয়, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিত না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য- মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, হামলার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে, খুব দ্রুতই গ্রেফতার অভিযান চালানো হবে।”

স্থানীয় বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি। তারা বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ না করলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

 


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *