
আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট নানা প্রস্তাব ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমূল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন সহকারী শিক্ষা অফিসার মোছাঃ জুলেখা খাতুন। সভায় উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ইউএনও মোঃ নাজমূল ইসলাম বলেন, আমরা যদি আগামী প্রজন্মকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে চাই, তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই হবে। পাঠ্যপুস্তক নির্ভরতার পাশাপাশি নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও বাস্তবজ্ঞান অর্জনেও বিদ্যালয়কে প্রধান ক্ষেত্র হতে হবে।
তিনি আরও জানান, শিক্ষা খাতের উন্নয়নে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে, তবে অভিভাবক, শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সম্মিলিত প্রচেষ্টাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের মূল উপায়।
শিক্ষকরা জানান, আর্থিক সংকট, পারিবারিক কাজকর্ম কিংবা শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। এ সমস্যা সমাধানে তারা কিছু প্রস্তাব রাখেন—
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, পাঠদানে নতুন ও সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তন, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ
সহকারী শিক্ষা অফিসার মোছাঃ জুলেখা খাতুন বলেন, শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থীর ত্রিমুখী সমন্বয় ছাড়া উপস্থিতি বাড়ানো সম্ভব নয়। নিয়মিত উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অভিভাবকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
বিদ্যালয় সভাপতিরা জানান, অবকাঠামোগত ঘাটতি, শিক্ষাসামগ্রীর অভাব ও শিক্ষক সংকট শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।
তাদের মতে, অভিভাবক পর্যায়ের সচেতনতার অভাবও একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। অনেক অভিভাবক শিশুদের দিয়ে গৃহকর্ম করানোকে বিদ্যালয়ে পাঠানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। প্রধান শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা ব্যবস্থা বিভির্র কারণে ভেঙে পড়ার পর অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। তাদের বিদ্যালয়মুখী করতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলা, বিজ্ঞান মেলার মতো উদ্যোগ কার্যকর হতে পারে।
আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসুক—এটাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা জরুরি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়— নিয়মিত উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হবে, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আলোচনা করা হবে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে “উপস্থিতি মনিটরিং টিম” গঠন করা হবে
ইউএনও মোঃ নাজমূল ইসলাম বলেন, শিক্ষা উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই উপস্থিতির হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব।
সভায় অংশগ্রহণকারী অংশীজনরা আশা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মিরপুর উপজেলার শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।