কুষ্টিয়ার মিরপুরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ চায়না জাল জব্দ ও ধ্বংস

Spread the love

আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।

কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার নিমতলা বাজার সংলগ্ন জিকে খালে অবৈধভাবে মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত জাল উচ্ছেদে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট ২০২৫) সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় অবৈধভাবে ব্যবহৃত ২৫টি চায়না দুয়ারী জাল ও প্রায় ২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মেশকাতুল ইসলামের উপস্থিতিতে জব্দকৃত জালগুলো আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

অভিযান সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি জিকে খালের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ জাল বসিয়ে প্রজনন মৌসুমে মাছ নিধন করে আসছিল। এতে খালের প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল এবং স্থানীয় জেলেদের জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এসব খবরের ভিত্তিতে নিমতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে অংশ নেওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জলাশয়ে অবৈধ জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব জালের মাধ্যমে ছোট মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ধ্বংস হচ্ছে, যা দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব অবৈধ জাল উচ্ছেদ করা হবে। তিনি আরও জানান, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও জেলেদের সুরক্ষা নিশ্চিতে উপজেলা প্রশাসন সবসময় কঠোর অবস্থানে থাকবে।
এসময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মেশকাতুল ইসলাম বলেন, অবৈধ জাল ব্যবহার শুধু আইন ভঙ্গই নয়, এটি প্রকৃতির জন্যও ক্ষতিকর। এসব জাল ধ্বংস করার মাধ্যমে আমরা একটি বার্তা দিচ্ছি যে, আইন না মানলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা এ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন। অভিযান চলাকালে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় জেলেদেরও সতর্ক করা হয় এবং বৈধ উপায়ে মাছ ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে সরকার দেশব্যাপী মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। বিশেষ করে জিকে খাল কুষ্টিয়া অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় হিসেবে পরিচিত। খালটির মাধ্যমে আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ জালের দৌরাত্ম্যের কারণে খালে দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয়রা।

নিমতলা বাজার এলাকার কয়েকজন জেলে জানান, অবৈধ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জালের কারণে তারা সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত মাছ পাচ্ছিলেন না। এর ফলে তাদের আয়ও কমে যাচ্ছিল। আজকের অভিযানের মাধ্যমে জেলেদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।

অভিযান শেষে উপজেলা প্রশাসন জানায়, শুধু অভিযান নয়, ভবিষ্যতে নিয়মিত মনিটরিং চালানো হবে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে প্রচার কার্যক্রমও জোরদার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ একসঙ্গে আটকা পড়ে যায়, ফলে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে মাছের বংশবিস্তার ব্যাহত হয়। এর ফলে শুধু মাছই নয়, পুরো জলজ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

প্রশাসনের এই মোবাইল কোর্ট অভিযানকে মৎস্যবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে স্থানীয় মানুষ আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালিত হলে খালের মৎস্য সম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে আজকের এই অভিযান অবৈধ জাল উচ্ছেদে প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থানকে আবারও সামনে এনেছে। একই সঙ্গে এটি দেশের জলাশয় ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের আন্তরিক প্রয়াসের প্রতিফলন।

 


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *