
আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের হালসা গ্রামের হতদরিদ্র রমজান আলী (৫২)। জীবিকার একমাত্র ভরসা ছিল একটি পাখি ভ্যান। সেই গাড়ি চালিয়েই তিনি সংসার চালাতেন। কিন্তু সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে চোরচক্র তাঁর একমাত্র পাখি ভ্যানটি চুরি করে নিয়ে যায়। এতে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই ভ্যানচালক ও তাঁর পরিবার।
গরিব পরিবারের সন্তান রমজান আলীর জীবনে এর আগেও অভাব-অনটন লেগেই ছিল। তবে পাখি ভ্যানটিকে কেন্দ্র করে তাঁর সংসার কোনোমতে টিকে ছিল। এখন ভ্যান হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সংসারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে তিনি যে দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন, তা দেখে গ্রামবাসীও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।
রমজান আলী জানান, প্রায় কয়েক বছর আগে ধার দেনা করে তিনি পাখি ভ্যানটি কিনেছিলেন। ভ্যানটি চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করতেন। সেই সামান্য টাকায় স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে দিন চলে যেত। এখন আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
গাড়ি ছাড়া আমার আর কিছু নাই। আমি কারও বাড়িতে দিনমজুরি করতে পারি না, কারণ এ বয়সে শরীরে আর তেমন জোর নাই। ভ্যানটা ছিল আমার ভরসা। এখন গাড়ি নাই, সংসার কীভাবে চলবে বুঝতে পারতেছি না। ভ্যান হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন রমজান আলী।
পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে বাড়ির উঠোনে তালা মেরে ভ্যানটি রাখা হয়েছিল। ভোরে উঠে তাঁরা দেখেন ভ্যানটি নেই। আশপাশে খুঁজেও গাড়ির কোনো সন্ধান মেলেনি। স্থানীয়দের ধারণা, আগেই পরিকল্পনা করে চোরচক্র ভ্যানটি তুলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় অভিযোগ জানানো হলেও এখনো গাড়ির কোনো খোঁজ মেলেনি বলে জানিয়েছেন রমজান আলী।
রমজান আলীর স্ত্রী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। স্বামীর ওই গাড়ির টাকায় সংসার চলত। এখন রান্না করার মতো চালও নাই ঘরে। ছেলে মেয়েদের মুখে কী খাবার তুলে দেবো তা নিয়ে আমরা দিশেহারা।
গ্রামের প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম জানান, রমজান খুব সৎ মানুষ। নিজের পরিশ্রমে সংসার চালায়। এখন ভ্যান হারিয়ে পুরো পরিবার বিপদে পড়েছে। আমরা প্রতিবেশীরা যতটুকু পারছি সাহায্য করছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এভাবে ওদের সংসার চলবে না। গাড়ি ছাড়া তার আর কোনো উপায় নাই।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আশপাশের এলাকায় খোঁজ চলছে। খুব দ্রুত ভ্যানটি উদ্ধার করে মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিরপুর উপজেলার অধিকাংশ পরিবারই ভ্যান, রিকশা বা দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক পরিবারই একটিমাত্র গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। সেই গাড়ি চুরি হয়ে গেলে পুরো পরিবারই বিপাকে পড়ে যায়। তাই চোরচক্রের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ।
রমজান আলী বলেন, আমি চাই প্রশাসন আমার গাড়ি ফেরত দিক। যদি সেটা আর না পাওয়া যায়, তাহলে সরকার যদি নতুন একটা ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে অন্তত আমি আবার আয় করতে পারবো। না হলে আমার পরিবার না খেয়ে মরবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও স্বীকার করেছেন, গরিব মানুষের এমন দুর্দশা হৃদয়বিদারক। তাঁরা প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাখি ভ্যান চুরির ঘটনায় শুধু একটি পরিবারের জীবিকা বন্ধ হয়ে যায়নি, বরং এ ঘটনাটি গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভঙ্গুর জীবনের প্রতিচ্ছবি । যাঁরা দিন আনে দিন খায়, তাঁদের কাছে সামান্য সম্পদও কতটা মূল্যবান তা বোঝা যায় রমজান আলীর ক্ষেত্রে।