যুদ্ধের পরও গাজার ‘বাফার জোন’ ছাড়বে না ইসরায়েল, বললেন মন্ত্রী

Spread the love

 

যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার ব্যর্থ চেষ্টার মধ্যে ইসরায়েল বলেছে, যুদ্ধ বন্ধে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হলেও তাদের বাহিনী গাজায় নিজেদের বানানো বাফার জোন ছাড়বে না।

বুধবার তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গত মাসে নতুন করে অভিযান শুরুর পর ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নামে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ভেতরে ঢুকে বিস্তৃত এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে এবং ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে ভূখণ্ডটির দক্ষিণ ও উপকূলরেখা বরাবর ক্রমেই ছোট হয়ে আসা এলাকাগুলোতে ঠেসে দিচ্ছে।
“অতীতের মতো হবে না। যেসব এলাকা সন্ত্রাসীমুক্ত ও জব্দ করা হয়েছে আইডিএফ (ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী) সেখান থেকে সরবে না,” সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেওয়া বিবৃতিতে এমনটাই বলেন কাটজ।

“লেবানন ও সিরিয়ার মতোই, গাজার স্থায়ী বা অস্থায়ী যে কোনো পরিস্থিতিতে আইডিএফ শত্রু ও (ইসরায়েলি) বসতিগুলোর মাঝে বাফার হিসেবে থাকবে,” বলেছেন তিনি।

গত মাস থেকে চলমান অভিযানের সারসংক্ষেপ দিতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষুদ্র ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির ৩০ শতাংশ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

কেবল দক্ষিণ গাজাতেই ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্তবর্তী শহর রাফা দখলে নিয়েছে এবং আরও ভেতরে ঢুকে ‘মোরাগ করিডোর’ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এই করিডোরটি রাফা ও খান ইউনিস শহরের মাঝে গাজার পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

মধ্য নেটজারিম এলাকাজুড়ে বিস্তৃত একটি করিডোরও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে; প্রতিনিয়িত তারা তাদের দখলে থাকা অঞ্চলের আওতা বাড়াচ্ছে, এরই মধ্যে উত্তরে গাজা শহরের ঠিক পূর্বে অবস্থিত শেজাইয়া এলাকাও তাদের ‘বাফার জোনে’ ঢুকে গেছে।

তেল আবিব বলছে, গত ১৮ মার্চ থেকে অভিযানে তারা যে কয়েকশ হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, তার মধ্যে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বেশ ক’জন ঊর্ধ্বতন কমান্ডারও আছে। ইসরায়েলের এ্ অভিযান নিয়ে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় দেশগুলো ব্যাপক উদ্বেগও জানিয়েছে।

জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর গাজা পরিস্থিতি দুই মাস মোটামুটি শান্ত থাকলেও ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল ফের ভূখণ্ডটিতে আক্রমণ শুরু করে। তাতে এরই মধ্যে ৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়কের কার্যালয় (ওসিএইচএ)।

এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বোমায় অন্তত ১ হাজার ৬৩০ জনের প্রাণও গেছে।

চিকিৎসা বিষয়ক দাতব্য সংগঠন এমএসএফ জানিয়েছে, গাজা ‘গণকবরে’ পরিণত হয়েছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী গোষ্ঠীগুলো সেখানে সহায়তা পৌঁছে দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

“আমরা চোখের সামনে গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠীর ধ্বংস ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি দেখছি,” বিবৃতিতে বলেছেন গাজায় এমএসএফের জরুরি সমন্বয়ক আমান্দে বাজেরোলে।

মার্চে অভিযান শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ঢুকতে দিচ্ছে না।

কাটজ বলেছেন, তারা অবকাঠামো তৈরি করছেন, যার মাধ্যমে পরে বেসরকারি কোম্পানিগুলো সহায়তা পৌঁছে দিতে পারবে, তবে আপাতত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

গাজাবাসীদের ভূখণ্ডটি ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ দিতে ইসরায়েল একটি পরিকল্পনা সাজাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি, তবে কোন কোন দেশ এ বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে নেবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বুধবারও কাটজ হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি পুনর্বার ব্যক্ত করেছেন। হামাস আগেই বলেছে, কোনো অবস্থাতেই তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না।

দুই পক্ষের এই অবস্থানেই বোঝা যাচ্ছে মিশরের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবনে যতই চেষ্টা করুক না কেন, তেল আবিব ও হামাসের মধ্যে কিছু বিষয়ে দূরত্ব অত্যন্ত প্রকট।

হামাস বারবার বলেছে, অস্ত্র সমর্পণ এমন একটি ‘সীমা’ যা তারা কখনোই অতিক্রম করবে না। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়ারও দাবি জানাচ্ছে তারা।

“যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার, ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং পুনর্গঠন শুরুর সত্যিকারের নিশ্চয়তা ছাড়া যে কোনো বিরতি হবে রাজনৈতিক ফাঁদ,” বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে হামাস।

দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, আটক ৫৯ জিম্মির কয়েকজনের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে কিছু খবর প্রকাশিত হলেও আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তেল আবিবের বিশ্বাস, ক্রমশ বাড়তে থাকা সামরিক চাপে নতি স্বীকার করে হামাস শেষ পর্যন্ত তাদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।

কিন্তু সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নারাজ জিম্মিদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা।

চুক্তির সাহায্যে যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ইসরায়েলজুড়ে বড় বড় বিক্ষোভও হচ্ছে, যা দেশটির সরকারকে বেশ অস্বস্তির মধ্যেও রেখেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়ে হাজারের বেশি ইসরায়েলিকে হত্যা ও আড়াইশর মতো ইসরায়েলিকে জিম্মি করার পর তেল আবিব গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে। চলতি বছরের শুরুর দিকের দুই মাস বাদ দিলে তাদের টানা হামলা ও অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এদের মধ্যে নারী-শিশুসহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা যেমন আছে, তেমনি আছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার কর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *