মিরসরাইয়ে অবৈধ অর্থ নেওয়ার অভিযোগ জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে, দুজনকে বহিষ্কারের নিদ্ধান্ত

Spread the love

মিরসরাইয়ের ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বৃহত্তর ফেনী নদী বালু উত্তোলন সমিতির কাছ থেকে অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে দুজনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

অভিযুক্তরা হলেন- জোরারগঞ্জ থানার করেরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী ছত্তরুয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন প্রকাশ জাহাঙ্গীর হুজুর ও অপরজন হলেন জয়পুর পূর্ব জোয়ার গ্রামের রবিউল হোসেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিজস্ব তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া অভিযুক্ত আরো কয়েকজনের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সাম্প্রতিক করেরহাট গণিয়াতুল উলুম হোসাইনিয়া আলিম মাদ্রাসার হল রুমে কর্মী সম্মেলনে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আলাউদ্দিন শিকদার। এসময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, “যারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করবে, অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করবে, হারাম হালাল বিবেচনা করবে না অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মতো বিপথে পা বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, এটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এখানে ইসলামী হুকুম আহকাম মেনে চলতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর একটা কর্মীও যদি কোনো প্রকার সামান্যতমও অনৈতিক কাজে জড়ায় তাকে আমরা রাখব না। প্রয়োজনে পাঁচজন জনশক্তি দিয়ে দল চলবে। এখানে থাকতে হলে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। ন্যায় পরায়ণ হতে হবে। মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী হতে হবে। সৎভাবে জীবনযাপন করতে হবে। হারাম পরিহার করে হালাল গ্রহণ করতে হবে। কোনো প্রকার অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না।”

তিনি বলেন, “বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া দুই জামায়াত কর্মীর বিরুদ্ধে ফেনী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে রয়্যালিটি নিয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অবৈধ উপার্জনের সঙ্গে যুক্ত কাউকে জামায়াতে স্থান দেয়া হবে না। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”

বৈঠকে অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে জামায়াতের সব স্তরের নেতাকর্মীদের না থাকার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যারা বালু ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সিন্ডিকেটে যোগ দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে তাদেরকে অর্জিত সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিয়ে সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সংগঠনের এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, গুটিকয়েক জামায়াত নামধারী সুবিধাবাদী ব্যক্তির কারণে এলাকায় সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয় কর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালিত সাংগঠনিক তদন্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে জামায়াতের পরিচয় ব্যবহার করে অন্যায্য সুবিধা আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

অভিযুক্ত রবিউল হোসেন বলেন, “আমরা বালু ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। আমাদের নিজস্ব ব্যবসা এটি। আমরা কোনো সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে রয়্যালিটি নিই নাই। এটা আমাদের ব্যবসায়ের অংশ। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”

এবিষয়ে জানতে জাহাঙ্গীরকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে করেরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাস্টার ফখরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো মতামত দিতে পারব না। এটা আমাদের থানা আমির দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন ও বিস্তারিত বলবেন ।”

জোরারগঞ্জ থানা জামায়াতের আমির নুরুল হুদা হামিদী বলেন, “জামায়াতে ইসলাম কোনো রয়্যালিটি নামক কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেনি। যারা গ্রহণ করেছে তারা জামায়াতের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছে। আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তাদের কর্মী থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তারা আমাদের দায়িত্বশীল কেউ নয়। এগুলো আমরা বৈঠকে জনশক্তিদের জানিয়ে দিয়েছি। আরো অন্য কেউ যদি থাকে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *