গাজা যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব

Spread the love

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে জড়িত একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।

ওই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবটিতে ৫ থেকে ৭ বছর মেয়াদি একটি যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটবে এবং ইসরায়েল পুরোপুরি গাজা থেকে সরে যাবে।

অন্যদিকে হামাসের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল কায়রোতে আলোচনার জন্য পৌঁছনোর কথা রয়েছে। ইসরায়েল এখনো মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ইসরায়েল ফের গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করলে গত মাসে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে পড়ে। দুই পক্ষই একে অপরকে চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরো ৬০ জন আহত হয়েছে বলে মঙ্গলবার হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এ হামলাগুলোকে ‘চরম মাত্রার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই হামলায় অনেক বুলডোজার ও ভারী যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়েছে, যেগুলো হামাস পরিচালিত পৌর কর্তৃপক্ষ সড়ক মেরামত, ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার ও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে ব্যবহার করত। গাজার দক্ষিণে রাফা শহরের কিছু এলাকায় ট্যাংক চলাচল করতেও দেখা গেছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রায় ৪০টি প্রকৌশল যন্ত্রপাতি’তে হামলা চালিয়েছে, যেগুলো ৭ অক্টোবরের হামলার সময়ও ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা আরো বলেছে, ‘হামাস এই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে বিস্ফোরক পুঁতে রাখতে, ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ খননে, সীমানা ভাঙতে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকানো অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম খুঁজে পেতে।

ইসরায়েল তাদের অভিযান চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে কায়রোতে আলোচনার জন্য বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে হামাসের রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান মোহাম্মদ দরবিশ ও প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। এই বৈঠকটি এমন এক সময় হচ্ছে, যখন কয়েক দিন আগেই হামাস ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ওই প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের শর্তে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ছিল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার বলেন, তিনি যুদ্ধ শেষ করবেন না, যতক্ষণ না হামাস ধ্বংস হয় এবং সব জিম্মিকে মুক্ত করা হয়।

হামাস বলেছে, তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে না, যতক্ষণ না ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেবে।আলোচনার সঙ্গে জড়িত ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, হামাস ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা গাজা শাসনের দায়িত্ব এমন কোনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে দিতে প্রস্তুত, যারা ‘জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে সম্মত’। এই কর্তৃপক্ষ হতে পারে পশ্চিম তীর ভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) অথবা একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো। তবে নেতানিয়াহু ভবিষ্যতে গাজার শাসনে পিএর যেকোনো ধরনের ভূমিকার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। গাজায় ২০০৭ সাল থেকে হামাস শাসন করছে।
যদিও এই উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা এখনই বলা কঠিন, তবে সূত্রটি এই মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, হামাস ‘অভূতপূর্ব নমনীয়তা’ দেখিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে সোমবার পর্যন্ত গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৫১ হাজার ২৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।

এদিকে কায়রোতে অবস্থিত ফিলিস্তিনি দূতাবাস তাদের কর্মীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গাজার সীমান্তের কাছে মিসরের আরিশ শহরে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে, যারা গাজা থেকে মিসরের হাসপাতালে চিকিৎসাসংক্রান্ত স্থানান্তর ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের সমন্বয় করছিলেন। সূত্র-বিবিসি


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *