চুক্তির ‘খুব কাছে’ রাশিয়া-ইউক্রেইন, বললেন ট্রাম্প

Spread the love

মস্কোতে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেইন ‘একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছে।

শুক্রবার আলোচনার ক্ষেত্রে ‘চমৎকার দিন’ গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি; বিপরীতে ক্রেমলিন উইটকফ-পুতিন বৈঠককে বর্ণনা করেছে ‘গঠনমূলক’ হিসেবে, বলছে বিবিসি।

ট্রাম্প এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই সমঝোতা হয়েছে’ জানিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেইনকে ‘শীর্ষ-পর্যায়ের বৈঠকে বসে’ দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন করারও আহ্বান জানান।
এদিকে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার রাতে দেওয়া ভিডিও বার্তা বলেছেন, নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মানাতে রাশিয়ার ওপর ‘সত্যিকারের চাপ’ দরকার।

একইদিন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি হলেই কেবল মস্কো ও কিইভের মধ্যে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র যে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে তাতে রাশিয়ার দখলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ ভূমি ইউক্রেইনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়তে হবে- এমন শর্ত আছে বলে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া দখলে নিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই উপদ্বীপটিকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত, শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে রোমে নামা ট্রাম্প বেশ কিছুদিন ধরেই এমনটা বলে আসছেন। তবে জেলেনস্কি বারবারই এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।

রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেইনে সর্বাত্মক অভিযানে নামে; ইউক্রেইনের স্বীকৃত ভূখণ্ডের প্রায় ২০ শতাংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বলছে বিবিসি।

শুক্রবার মস্কোতে পুতিন-উইটকফ তিন ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ট্রাম্পের এ মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত এ নিয়ে চতুর্থবার রাশিয়া সফরে গেলেন।
দুজনের এবারের বৈঠককে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ অ্যখ্যা দিয়েছেন পুতিনের দূত ইউরি উষাকভ।

কেবল ইউক্রেইন প্রসঙ্গেই নয়, আন্তর্জাতিক নানান ইস্যুতেও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে ‘কাছাকাছি এনেছে’ এ বৈঠক, বলেছেন তিনি।

“ইউক্রেইন সঙ্কট প্রসঙ্গে, সুনির্দিষ্টভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেইনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা পুনরায় শুরুর ব্যাপারে কথা হয়েছে,” বলেছেন এ রুশ কর্মকর্তা।

কয়েকদিন আগে পুতিনও জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ইউক্রেইন যুদ্ধের শুরুর দিকে এমন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্টের আগ্রহ দেখা গেলেও, পরে তিনি ওই দুয়ার বন্ধ করে দেন।

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি চলে যাওয়া ৩০ ঘণ্টার ইস্টার যুদ্ধবিরতিকে বাড়িয়ে ৩০ দিন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এর প্রতিক্রিয়াতেই পুতিন তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার এ ইঙ্গিত দেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষ নতুন কোনো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি।

শুক্রবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কিকে ক্রাইমিয়ার ব্যাপারে সুর নরম করতেও দেখা গেছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ক্রাইমিয়া রাশিয়ারই থাকবে।”

ওই মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বিবিসিকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেটা বলেছেন তা সত্য, আজ আমি তার সঙ্গে এই ব্যাপারে একমত যে, ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ পুনর্দখলে পর্যাপ্ত অস্ত্র আমাদের কাছে নেই।”

ওয়াশিংটন যে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, তা এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে না এলেও তাতে ইউক্রেইনের যেটুকু ভূমি রাশিয়া দখল করেছে, তা মস্কোর হাতে ছেড়ে দেয়ারই প্রস্তাব আছে বলে একাধিক খবরে বলা হচ্ছে।

দিনকয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রস্তাব ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের দিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউরোপ ও ইউক্রেইনেরও একটি পাল্টা প্রস্তাব রয়েছে।

এই দুই প্রস্তাবের মধ্যে ব্যাপক অমিল রয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রস্তাব দুটি দেখেছে বলেও দাবি করেছে তারা।

সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং লুহানস্ক অঞ্চলসহ অন্যান্য যেসব এলাকা মস্কোর দখলে আছে, তাকে ‘ডি-ফ্যাক্টো’ স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে ইউরোপ ও ইউক্রেইনের প্রস্তাবে কেবল যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হওয়ার পর রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেইনীয় অঞ্চলগুলোতে কী কী ঘটতে পারে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

মার্কিন প্রস্তাবে ইউক্রেইনের নেটো জোটে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনাও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে, বলেছে রয়টার্স।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *