বাড়ি নির্মাণের জন্য কিনেছিলেন জমি, সেখানেই দাফন হবে হাসানের

Spread the love

নিউজ ডেস্ক

ছোটবেলায় যখন সে তার বাবাকে হারায়, তখন সে এবং তার মা নানার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। নানার বাড়িতে থাকার সময়, হাসানের স্বপ্ন ছিল একদিন তার নিজস্ব এক টুকরো জমি হবে এবং সেই জমিতে একটি স্বপ্নের বাড়ি হবে। একটি শান্ত ভিটেমাটির জন্য ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করা হাসান শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবতেন না। ছিল দেশের প্রতি অকুণ্ঠ প্রেম। দেশের প্রয়োজনে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৯ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বাড়ি নির্মাণের জন্য কেনা সেই জমিতেই এখন হাসানের দাফন হবে।

রোববার (২৫ মে) সকালে জানাজা শেষে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে মোহাম্মদ হাসানকে দাফন করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে। মোহাম্মদ হাসান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ সেলিমের একমাত্র ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর হাসান মা মাহিনুর বেগম ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে তার নানার বাড়িতে। সেখান থেকেই জীবনযুদ্ধ শুরু হয় তার। ২৫ পারা কোরআনের হাফেজ ছিলেন তিনি। দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামের একটি গ্যারেজে কাজ শুরু করেন। নানা বাড়িতে থাকার সময়ই হাসানের স্বপ্ন জাগে এক টুকরো জমি আর ছায়া নিবিড় শান্ত একটি বাড়ির। ছোট থেকে জীবন সংগ্রামী হাসান সেই স্বপ্ন পূরণ করতে কিনেছিলেন জমি। বাড়ি নির্মাণের জন্য সেই জমি ভরাটও করেছিলেন। বাড়ির পাশে কবরস্থান তৈরির জন্য রেখেছিলেন জমি। কিন্তু এসব কিছুই আর বাস্তবায়ন হবে না। বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গাটি খালি পরে থাকলেও কবরস্থানের জন্য হাসানের রেখে দেওয়া সেই জমিতেই প্রথম দাফন হতে যাচ্ছে হাসানের। কিন্তু কে জানত, কবরস্থানের জন্য রাখা প্রথম কবরটিই হবে তার?

গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের হাজারো মানুষের সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে গুলিতে গুরুতর আহত হন হাসান। প্রথমে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে পাঠানো হয় পায়াথাই পাহোলিওথিন হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাত ১১টা ১০ মিনিটে হাসানের সংগ্রামী জীবনের শেষ হয়। আজ রোববার (২৫ মে) সকালে জানাজা শেষে হাসানকে তার স্বপ্নের সেই জমিতেই দাফন করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে হাসানের জীবন সংগ্রাম দেখা সকলেই বলছেন ‘স্বপ্ন ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে—হলো, তবে জীবনের জন্য নয়, চিরনিদ্রার জন্য।’

হাসানের আত্মীয় শামিম চৌধুরী বলেন, হাসান পরিবারের বড় ছেলে। তার অনেক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সব কিছু তুচ্ছ করে সে চলে গেছে। তার আলাদা বাড়ি করে থাকার স্বপ্ন ছিল। আস্তে ধীরে সব হচ্ছিল। সে নতুন বাড়িতে আলাদা কবরস্থান রেখেছে। প্রথম কবরটিই হবে তার, তা কে জানত? বাবা হারা এতিম ছেলেটা সবাইকে কাঁদিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালীর আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে শনিবার (২৪ মে) রাত ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাসানের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহীদ হাসানের মা মাহিনুর বেগমের ইচ্ছানুযায়ী তাকে রোববার সকাল ৯টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে দাফন করা হবে। হাসান ছিল সাহসী ও সংগ্রামী এক তরুণ। তার আত্মত্যাগ আমাদের পথ দেখাবে।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *