বাংলাদেশের রাজনীতি; এবং তারুণ্যের ভাবনা!

Spread the love

সম্পাদকীয়:

বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই নানা চড়াই-উতরাই, সংঘাত ও প্রত্যাশার ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলছে। একদিকে রয়েছে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে রয়েছে সম্ভাবনার বিশাল ক্ষেত্র—বিশেষ করে তরুণদের মাধ্যমে। বর্তমান প্রজন্মের তারুণ্য রাজনৈতিক সচেতনতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকে অনেক বেশি সক্রিয় হলেও, তাদের অনেকেই রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এটি যেমন হতাশার, তেমনি গভীর মনোযোগ দেওয়ার মতো একটি বিষয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় আনুগত্য প্রাধান্য পায় অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষতা, সততা বা জনসেবার চেয়ে। এই প্রেক্ষাপটে তরুণরা ক্রমশ রাজনীতিকে দেখছে ‘দূষিত’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘সহিংস’ এক খেলার মাঠ হিসেবে। ফলে তারা নিজেদের সম্ভাবনা খুঁজে নিচ্ছে অন্য খাতে—স্টার্টআপ, ফ্রিল্যান্সিং, সামাজিক উদ্যোগ কিংবা বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে: এভাবে যদি রাজনীতি থেকে মেধাবী তরুণরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব কোথা থেকে আসবে?

তারুণ্যের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণ। তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি চায়, কিন্তু তারা চায় নতুন ধাঁচের রাজনীতি—যেখানে থাকবে জবাবদিহিতা, মুক্ত চিন্তার পরিসর, এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার। তারা চায় এমন এক রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করা হবে, এবং নেতৃত্বে আসবে যোগ্যরা, শুধুমাত্র দলের প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়।

তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক দলগুলোর তরুণদের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করা। তরুণদের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ, অংশগ্রহণমূলক ছাত্র-রাজনীতি, এবং স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে রাজনীতিকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। পাশাপাশি তরুণদেরও প্রয়োজন নিজেদের প্রস্তুত করা—মূল্যবোধ, যুক্তিবাদ ও নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তারুণ্যের হাত ধরে গঠিত এক নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রের ওপর। একদিকে তরুণদের যদি সাহস ও আদর্শের পথে এগিয়ে আসতে হয়, অন্যদিকে রাজনীতিকদেরও তাদের জন্য দরজা খুলে দিতে হবে। রাজনীতি থেকে তারুণ্যকে বাদ দিয়ে কোনো টেকসই উন্নয়ন বা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়।

শেষ কথা—বাংলাদেশের রাজনীতিকে যদি সত্যিকার অর্থে গতিশীল, গণমুখী এবং উন্নয়নবান্ধব করতে হয়, তবে তারুণ্যকে শুধু অনুপ্রেরণা নয়, কার্যকর অংশীদার হিসেবেও সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনীতির কাঠামোতে যদি তরুণদের জন্য জায়গা তৈরি করা যায়, তবে এরাই হবে আগামীর আলোকবর্তিকা।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *