সাংবাদিকতা ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট!

Spread the love

 

সম্পাদকীয়

সাংবাদিকতা একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য হয়। এটি শুধুমাত্র তথ্য পরিবেশনের মাধ্যম নয়, বরং একটি সমাজের বিবেক, প্রতিচ্ছবি ও পথপ্রদর্শক হিসেবেও কাজ করে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুক্ত সাংবাদিকতা নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সহায়ক এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কাঠামোয় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ভূমিকা বর্তমানে এক অদ্ভুত দ্বৈত বাস্তবতার মধ্য দিয়ে চলছে। একদিকে, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সাংবাদিকতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত ও দ্রুতগতির হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও সংবাদ পরিবেশনের অংশ হয়ে উঠেছে। এতে করে গণমাধ্যমের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্যবিকৃতি ও গুজবের ঝুঁকি।

অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে চলছে নানামুখী উদ্বেগ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং সাংবাদিক সংগঠন অভিযোগ করে আসছে যে, সাংবাদিকরা নিয়মিত হুমকি, হয়রানি ও এমনকি সহিংস হামলার শিকার হচ্ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ কিছু আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার অভিযোগও রয়েছে। এসবের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা অনেক সময় আত্মনিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটেন, যা শেষ পর্যন্ত সত্য প্রকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

বর্তমানে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা হলো—স্বাধীনতা বনাম দায়িত্বশীলতা। সাংবাদিকদের অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে, তবে সে স্বাধীনতার সঙ্গে অবশ্যই দায়িত্বশীলতা থাকতে হবে। গুজব, অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রকাশ যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ভয় বা চাপের মুখে সত্য গোপন করাও সমানভাবে নিন্দনীয়।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ এবং নতুন প্ল্যাটফর্মে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চর্চা ক্রমেই বাড়ছে। সিভিক জার্নালিজম, অনুসন্ধানী রিপোর্টিং ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও জনমুখী সাংবাদিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি স্বাধীন, দায়িত্বশীল ও নৈতিক সাংবাদিকতা অপরিহার্য। সরকার, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক ও সাধারণ জনগণ—সব পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সত্যনিষ্ঠ, নৈতিক ও জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতা চর্চাই হতে পারে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি দৃঢ় করার পথ।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *