পরিস্থিতিকে অতল গহ্বরে ঠেলে দিল যুক্তরাষ্ট্রই

Spread the love

এডিটোরিয়াল ডেস্ক

ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান-ইরানের এই তিন পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা হামলা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। উত্তেজনাকর ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে মার্কিন এই সরাসরি হস্তক্ষেপ ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং জাতিসংঘ সনদের মূলনীতিকে উপেক্ষা করেছে। এই ধরনের একতরফাবাদ নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে ক্ষুন্ন করে। মার্কিন হামলা কেবল ‘জোর যার মুলুক তার’ দৃষ্টান্তই স্থাপন করতে পেরেছে।

যদিও ওয়াশিংটন পরামর্শ দিয়েছে যে, শনিবার ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমা হামলা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখার জন্য একটি সংযত পদক্ষেপ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন চাননি। তিনি আমেরিকাকে একটি বিপর্যয়কর যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার ঝুঁকির জন্য ‘সম্পূর্ণ দায়িত্ব’ নিজ কাঁধে বহন করবেন। নিঃসন্দেহে এটি বিদেশি সংঘাত এড়াতে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রচারণার প্রতিশ্রুতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

এই হামলাগুলি ইতিমধ্যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছে। এই হামলার তাৎক্ষণিক পরিণতি ও প্রভাব নিয়ে বিশ্বকে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। এই হামলা কেবল ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাই লঙ্ঘন করেনি, বরং এটি পারমাণবিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক আন্তর্জাতিক আইন এবং নিয়মও লঙ্ঘন করেছে।

আন্তর্জাতিক আইন বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক স্থাপনাগুলির স্পষ্ট সুরক্ষা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জেনেভা কনভেনশনের অতিরিক্ত প্রোটোকল ১ এর ৫৬ অনুচ্ছেদে পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে আক্রমণ স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। কারণ এই ধরনের আক্রমণে পারমাণবিক লিকেজ হলে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাও তাদের অনেক প্রস্তাবে পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়ে আসছে।

ইরানের পারমাণবিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য জোরদার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটলো। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে, হামলার পরে ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত থাকতে পারে! তবে শনিবারের হামলা সম্ভবত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান নিশ্চিত করার পুরো প্রক্রিয়াটিকে লাইনচ্যুত করল।

এই হামলার পর ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের ক্রমবর্ধমান কার্যকর পাল্টা প্রতিক্রিয়া আরও জোরাল হবে, সংঘাতকে আরও বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। যদিও সেই যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাওয়ার অবস্থায় ইসরায়েল আদৌ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শনিবারের হামলা বিপন্ন ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য হলেও বাস্তবে তারা পরিস্থিতিকে আরও অতল গহ্বরের দিকে ঠেলে দিল।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যথার্থই সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এহেন পদক্ষেপ ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি’, যা চরম সংকটে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য বিপর্যয়কর মানবিক পরিণতির ঝুঁকি তৈরি করবে।

বোমা হামলার পরপরই ট্রাম্পের ‘যদি দ্রুত শান্তি না আসে’ তবে আরও হামলার হুমকি অস্থিরতার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। আরও সংঘাত অনিবার্যভাবে বিশ্বের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশ্ব শান্তি, জ্বালানি নিরাপত্তা বিপন্ন করার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলকেও ব্যাহত করবে। যা ভঙ্গুর বিশ্ব অর্থনীতিকে সজোরে ধাক্কা দেবে।

বিশ্ব যখন মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তখন যুক্তির জয় অপরিহার্য। একতরফা বলপ্রয়োগ ও উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি নয়, কূটনীতিই টেকসই নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক বিস্তার রোধের একমাত্র কার্যকর পথ হোক।

দ্য চায়না ডেইলি’র সম্পাদকীয় অবলম্বনে


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *