
কক্সবাজার, করেসপন্ডেন্ট।
কক্সবাজারের রামুতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জমি দখল, ইয়াবা লুট, অস্ত্র মহড়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে অধ্যক্ষকে হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি।
গত এক সপ্তাহে পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে বহিষ্কার এবং তিনজনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রদলের উপজেলা আহ্বায়ক পদত্যাগ করেছেন। দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ ভুট্টোকে শোকজ করা হয়েছে।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফুরকান উল্লাহকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরণ ও দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। রামু উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল বশর বাবু জানান, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফুরকান উল্লাহকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানা গেছে, রামু সরকারি কলেজে অধ্যক্ষকে হুমকির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাছানুল ইসলাম জানান, গত ২৪ জুন ফুরকান উল্লাহ কলেজে নির্মাণাধীন সীমানা প্রাচীর নিয়ে প্রথমে ফোনে এবং পরে সরাসরি এসে তাকে হুমকি দেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
শিক্ষক মোবারক হোসেন জানান, ফুরকান উল্লাহ অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে চিৎকার করে গালিগালাজ করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সিনিয়র শিক্ষক শহীদুল হক কাজল জানান, ঘটনার সময় এইচএসসি পরীক্ষা কমিটির মিটিং চলছিল এবং সবার সামনেই অধ্যক্ষকে ‘গুণ্ডা’ বলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুরকান উল্লাহ ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে দুটি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহানের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহাজাহান বিএনপির পদ ব্যবহার করে জমি দখল করেছেন এবং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।
এর আগে রামুতে ইয়াবা লুটের ঘটনায় বিএনপি, যুবদল ও শ্রমিক দলের আরও তিন নেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে। রাজারকুল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. নুরুল কবির, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দানু মিয়া ও শ্রমিক দলের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রামু উপজেলা বিএনপির এক প্রবীণ নেতা জানান, দলীয় পদ পেতে টাকা খরচ, তারপর জমি দখল ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
রামু থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ ফরিদ জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল জানান, দল কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় নেবে না এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।