
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল, মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আবার ভালো হতে চলেছে। কোনো সংঘর্ষের ইঙ্গিত তখন ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল, ট্রাম্প ও পুতিন একই রেলগাড়িতে, এক দিকেই এগোচ্ছেন। তবে সত্যিটা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্পর্ক এখন আগের মতো নেই। পুতিনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, যুদ্ধ অব্যাহত রাখাসহ নানা কর্মকাণ্ডে ট্রাম্প নাখোশ। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, পরাশক্তি দুই দেশের মধ্যে কি সংঘাত অনিবার্য? রাশিয়ার ট্যাবলয়েড মস্কোভস্কি কমসোমোলেটসের বরাত দিয়ে বিবিসি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ও পুতিনের মুখোমুখি অবস্থান এখন আগের চেয়ে কাছে সরে এসেছে। তারা কেউই নিজ অবস্থান বা দাবি থেকে পিছপা হচ্ছেন না। ফলে একটি সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, ট্রাম্প বারবার পুতিনকে যুদ্ধ থামানোর জন্য তাগিদ দিয়েছেন। নিজের দূতকে বারবার মস্কোয় পাঠিয়েছেন। এর পরও পুতিন কোনো সাড়া দেননি। বরং পুতিন তাঁর চলার পথ থেকে এক বিন্দুও সরে যাননি। এমনকি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ইচ্ছাও প্রকাশ করেননি।
পরিস্থিতি যখন এমন, তখনই ইউক্রেনের দিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে নতুন গ্রাম দখল করার কথা জানিয়েছে মস্কো। এ ছাড়া রাশিয়ান শাহেদ ড্রোনে ভারতীয় উপাদান পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। বিষয়টি তারা নয়াদিল্লি ও ইইউর কাছে উত্থাপন করেছে।
শুল্ক নিয়ে ভারতকে ট্রাম্প হুমকি দেওয়ায় নিন্দা করেছে ক্রেমলিন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। সেই অর্থ ইউক্রেনে সামরিক হামলায় মস্কোকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। দেশগুলোর নিজস্ব বাণিজ্যিক অংশীদার বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের নিষেধাজ্ঞা আর মানবে না রাশিয়া। রুশ নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ন্যাটোর রাশিয়াবিরোধী নীতির জবাবে মস্কো আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
বিবিসি জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতেও ফোনকলে কথা বলেন ট্রাম্প-পুতিন। তখন মনে হয়েছিল, যে কোনো সময় শক্তিধর দুই নেতার মধ্যে সরাসরি বৈঠক হতে পারে। পাশাপাশি ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের নিয়মিত রাশিয়া সফর একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। বাতাসে বার্তা ভাসছিল, ট্রাম্প এখন পুতিনে মুগ্ধ। কিন্তু ট্রাম্প এর চেয়ে বেশি কিছু চেয়েছিলেন পুতিনের কাছে, তা হলো একটি যুদ্ধবিরতি। তবে পুতিন কোনোভাবে সাড়া না দেওয়ায় ট্রাম্প ক্রেমলিনের প্রতি হতাশ হয়ে পড়েন। যুদ্ধ বন্ধে গত মাসে পুতিনকে ৫০ দিনের আলটিমেটাম দেন। পরে তা কমিয়ে ১০ দিনে আনেন। চলমান আলটিমেটাম এই সপ্তাহান্তে শেষ হওয়ার কথা। ইউক্রেনকে হয়তো পুতিন আত্মসমর্পণে বাধ্য করবেন বলে মনে করেন নিউইয়র্ক সিটির বিশ্ববিদ্যালয় দ্য নিউ স্কুলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক অধ্যাপক নিনা ক্রুশ্চেভা।
যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি এখনও সম্ভব
ট্রাম্প এখনও হাল ছাড়েননি। তার দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে আবার ক্রেমলিনে যাবেন এবং পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মস্কোর কিছু ভাষ্যকার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এবার পুতিন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চেষ্টা করবেন। মস্কোর এমজিআইএমও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক তত্ত্বের সহযোগী অধ্যাপক ইভান লোশকারেভ বলেন, সংলাপকে সহজ করার জন্য উইটকফ পুতিনের কাছে সহযোগিতার সুবিধাজনক প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারেন। পরিস্থিতি যাতে যুদ্ধবিরতির দিকে যায়। চেক প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল মনে করেন, ইউক্রেনকে টিকে থাকার জন্য আঞ্চলিক ক্ষতি মেনে নেওয়া উচিত।
ইউক্রেনকে ৪৩০ মিলিয়ন ইউরোর প্যাকেজ ঘোষণা তিন দেশের
নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্ক ইউক্রেনের জন্য ৪৩০ মিলিয়ন ইউরো সামরিক প্যাকেজ অর্থায়ন করবে। নরওয়ে সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সুইডিশ মন্ত্রীরা স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। এর আগে নেদারল্যান্ডস নতুন প্রকল্পের অধীনে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অস্ত্রের জন্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে কোনো উপায়ে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রাশিয়ার ওপর মার্কিন চাপকে স্বাগত জানিয়েছে। সোমবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, মিত্রদের অর্থায়ন ইউক্রেনীয় জনগণের জীবন রক্ষায় সহায়তা করবে।