
যশোর সদর উপজেলার ১২নং ফতেপুর ইউনিয়নে টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিতরণে মারাত্মক অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ডধারীদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিতরণের কথা থাকলেও মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়নের বিএনপি নেতা এলেম হোসেন তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পণ্য বিতরণ ব্যবস্থাকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রভাবিত করেছেন। তিনি তার পরিচিত ও দলীয় অনুসারীদের পক্ষে সরাসরি ডিলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যার ফলে অনেক প্রকৃত কার্ডধারী দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও কোনো পণ্য পাননি।
ভুক্তভোগীরা জানান, সকাল থেকে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও হঠাৎ দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু লোককে লাইনের বাইরে থেকে এনে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই স্মার্ট কার্ডবিহীন। অভিযোগ রয়েছে, এলেম হোসেন নিজেই এই কাজের তদারকি করেন এবং তার নির্দেশেই ডিলাররা বাধ্য হন এসব ব্যক্তিকে পণ্য দিতে।
তিনজন ডিলার ফতেপুর ইউনিয়নে এই পণ্য বিতরণ কার্যক্রমে দায়িত্বে ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিলার বলেন, “আমরা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কার্ড দেখে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এলেম হোসেন এসে আমাদের ওপর চিৎকার শুরু করেন, এবং বলেন, ‘আমার লোকদের আগে দাও, নইলে পরিণাম ভালো হবে না।’ আমরা ভয়ে বাধ্য হই।”
ঘটনাস্থলে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, অসংখ্য উপকারভোগী নারী-পুরুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা জানান, টিসিবি পণ্যের ওপর তারা নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন এই পণ্যই তাদের ভরসা। একজন কার্ডধারী বলেন, “আমার স্বামী দিনমজুর। এই পণ্য না পেলে আমাদের সংসার চালানো কঠিন। আজ এলেম সাহেবের লোকদের জন্য আমরা কিছুই পেলাম না।”
যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জানান, “টিসিবি পণ্য বিতরণে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না। যারা স্মার্ট কার্ডধারী, তারাই পণ্য পাওয়ার যোগ্য। কোনো প্রকার অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন,“এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা এলেম হোসেনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নের সচেতন নাগরিক ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা। তারা মনে করছেন, এই ধরনের অনিয়ম টিসিবির উদ্দেশ্যকেই ব্যর্থ করে দিচ্ছে।