পাকা ধানের হাসি আর গ্রামের টান

Spread the love

গোলাম কিবরিয়া, রাজশাহী প্রতিনিধি: 
রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের কেশরহাটের পাশ ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এক মাঠ। মাঠজুড়ে সারি সারি জিরা ধান। কৃষকের পরিশ্রমে সোনালি হয়ে উঠেছে সেই ধান, আর সেই সোনার রঙে রাঙা হয়েছে গ্রামের মুখ। এখন ধান কাটার মৌসুম। কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন পাকা ধান কাটায়। কে বলবে কষ্ট করছেন! যেন ধান কাটতে কাটতে আনন্দে ভেসে যাচ্ছেন তারা। গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে পাকা ধান কেটে বাড়ি ফিরছেন একেকজন।

এই দৃশ্য শুধু চোখে দেখার নয়, অনুভব করার। আমাদের সবুজে শ্যামল এই দেশকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে এমনই মুহূর্তগুলো। মাঠ থেকে ধান কেটে কৃষক জমিতেই রাখেন। পরে তা ছোট ছোট আটি করে নিয়ে আসেন বাড়িতে। গৃহিণীরা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন ধান শুকানোর কাজে। শুরু হয় মাড়াই। ধান মাড়াইয়ের পর আলাদা হয়ে যায় ধান ও গাছ। আবার সেই ধান শুকানো হয় ভালোভাবে।

শুধু ধান নয়, এই ধান গাছও মূল্যবান। গ্রামের মানুষ এটিকে বলে পোয়াল বা খ্যার। কেউ গরু ছাগলের খাবার হিসেবে জমা করে রাখেন, কেউবা বিক্রি করে সামান্য আয় করেন। এই পরিপূর্ণ চক্রেই জীবনের আনন্দ খুঁজে পান গ্রামের মানুষ। এখানে পুরুষেরা যেমন মাঠে ঘাম ঝরান, নারীরাও তেমনি ঘরের ভিতরে সামলান এক বিশাল দায়িত্ব। ধান শুকানো থেকে শুরু করে গরু ছাগলের যত্ন – সবকিছুই চলে নিখুঁত পরিকল্পনায়।

এই ধান কাটার সময়টাতে গ্রামের চারপাশে যেন উৎসবের আমেজ। সেই অপরূপ দৃশ্য না দেখলে অনুভব করা যায় না। শুধু চোখের দেখা নয়, মনের গভীরে ছুঁয়ে যায় এমন পরিবেশ।

আমি কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই মাটির পথে, কৃষকের জীবনঘনিষ্ঠ সেই বাস্তবতায়। আবার ফিরে আসার পরও মন পড়ে থাকে ওখানেই। বারবার টানে সেই গ্রামের টানে, রাঙা মাটির পথ, ধানের সুবাস, মানুষের আন্তরিকতা – এই সব কিছুতেই যেন লুকিয়ে আছে প্রকৃত সুখ।
“গ্রাম ছাড়া এই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভোলায় রে।”


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *