বাণিজ্যে মতপার্থক্য দূরীকরণে সম্মত যুক্তরাষ্ট্র-চীন

Spread the love

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বিশ্ব অর্থনীতির দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা গেছে। লন্ডনের দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর মঙ্গলবার (১০ জুন) কর্মকর্তারা বলেছেন, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও রফতানি বিধিনিষেধ শিথিলে একটি কাঠামো তৈরির বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।

লন্ডনে আয়োজিত বৈঠক শেষে চীনা উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী লি চেংগ্যাং বলেছেন, ‘‘চীন ও আমেরিকার প্রতিনিধি দল দুই দিনের ‘যুক্তিসঙ্গত, গভীর এবং স্পষ্ট’ আলোচনার পর বাণিজ্যের একটি কাঠামোতে সম্মত হয়েছে এবং আলোচনার ফলাফলগুলি স্ব-স্ব দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরা হবে।’’

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, গত মাসে জেনেভায় দুই পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির কাঠামোকে আরেকটু বাস্তবসম্মত করে তুলেছে লন্ডন বৈঠকের সমঝোতা। লন্ডনে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র রফতানিতে কঠোরতা কিছুটা কমাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি কাঠামোয় পৌঁছেছি, যা জেনেভা সম্মতিকে বাস্তবায়নের রূপরেখা দেবে এবং দুই প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের ভিত্তিতেই এটি হয়েছে। এখন আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদনের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করব, চীনা পক্ষও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুমোদন নেবে। অনুমোদন পেলে আমরা এটি কার্যকর করব।’

উভয় দেশের সামনে এখন ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে একটি বিস্তারিত বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ৩০ থেকে বেড়ে আবার ১৪৫ শতাংশ এবং চীনের পক্ষ থেকে ১০ থেকে ১২৫ শতাংশ হয়ে যাবে।

চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‌৫ জুন ফোনালাপের সময় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বারা উপনীত ঐকমত্য এবং জেনেভা বৈঠকে উপনীত ঐকমত্য বাস্তবায়নের জন্য উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে একটি কাঠামোতে পৌঁছেছে। গত দুই দিনে উভয় প্রতিনিধি দলের মধ্যে খুব গভীরভাবে মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের যোগাযোগ অত্যন্ত পেশাদার, যুক্তিসঙ্গত, গভীর এবং স্পষ্ট।’

‘আশা করি, লন্ডনের এই বৈঠকে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি তা চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে, চীন-মার্কিন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্থিতিশীল ও সুষ্ঠু উন্নয়নকে আরও উৎসাহিত করবে এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক শক্তি সঞ্চার করবে’-যোগ করেন লি চেংগ্যাং।

বৈঠকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ও ভাইস-প্রিমিয়ার হি লাইফেং মার্কিন প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারও ছিলেন। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও সোমবারের আলোচনায় অংশ নেন।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা আশা করেছিলেন যে বেইজিং এবং ওয়াশিংটন মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তিন-অঙ্কের শুল্কের ৯০ দিনের বিরতিতে সম্মত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত বৈঠকটি এবার শুল্ক আলোচনার বাইরেও যাবে।

চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ চেন ওয়েনলিং বলেন, ‘চীন-মার্কিন আলোচনার তাৎপর্য কেবল অর্জিত নির্দিষ্ট ফলাফলের মধ্যেই নয়, বরং বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য সমাধানের জন্য সমান সংলাপের পথকে প্রশস্ত করবে।’

চেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রত্যাশা রয়েছে, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে একটি স্থিতিশীল এবং গঠনমূলক পথে রাখার জন্য প্রজ্ঞা এবং দায়িত্ব প্রদর্শন করবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করবে।’

চীনের আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি মাইকেল হার্ট বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের একে অপরের সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া উচিত। শুল্ক যতটা সম্ভব কমানো এবং যতটা সম্ভব উন্মুক্ত বাণিজ্য দেখতে চাই আমরা।’

চাইনিজ একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের গবেষক ঝো মি বলেন, ‘যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজারের কণ্ঠস্বর শুনতে পারে এবং চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা কমাতে পারে, তাহলে চীন-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অসাধারণ প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ হবে এবং চীনে মার্কিন রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির আশা রয়েছে।’


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *