ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়া ছুড়লো ইসরায়েলি সেনারা

Spread the love

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ও অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করেছে ইসরায়েলি সেনারা। বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত ওই কেন্দ্রকে ঘিরেই ঘটে এ ঘটনা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দৃশ্যটি দেখা যায়, যা আল-জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট সানাদ যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ১০ জুলাই মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয় এবং শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে তা প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, তিনজন সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনা জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে উপস্থিত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে মরিচের গুঁড়া ছুড়ছেন। পুরুষ, নারী ও শিশুরা প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটছেন। অনেকে মুখ ঢেকে রেখেছেন, কেউ আবার পিঠে ময়দার বস্তা নিয়ে আতঙ্কে ছুটে যাচ্ছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিকে বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফ গাজায় কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৯১ জন ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘ ১৫ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, নিহতদের মধ্যে ৬৭৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ কিছুটা শিথিল হলে গাজায় বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে জিএইচএফ। তবে এই সংস্থার কার্যক্রম ঘিরে বিতর্কও কম নয়, কারণ তারা কার্যত জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন ত্রাণ ব্যবস্থাপনার বাইরে কাজ করছে।

গত রোববার গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এদের মধ্যে ৭৩ জনই ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষ। এর আগের দিন, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ১১৬ জন, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন ছিলেন ত্রাণপ্রত্যাশী।

গাজার বাসিন্দা মাহমুদ মোকাইমার জানান, তিনিও অন্যদের সঙ্গে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়ে, পরে সরাসরি গুলিবর্ষণ করে। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেন, ‘দখলদার বাহিনী আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।’ তিনি জানান, ঘটনাস্থলে তিনজনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন এবং বহু আহত মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

আল-জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হিন্দ খোদারি বলেন, গাজাবাসীরা জানেন ত্রাণকেন্দ্রে গেলে গুলিতে প্রাণও যেতে পারে, তবুও তারা যাচ্ছেন। কারণ তাদের শিশুদের খাওয়ানোর বিকল্প আর কিছু নেই। বাজারে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া এবং কিনে খাবার সামর্থ্য নেই।

রোববার গাজার আল-আকসা মার্টায়ার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চার বছর বয়সী রাজান আবু জাহের নামের এক শিশু অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে। একই দিন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানান, সেখানে অনাহারে আরও দুজন মারা গেছেন, যার মধ্যে একজন ৩৫ দিন বয়সী নবজাতক।

গাজার বিভিন্ন স্থানে শিশুদের না খেয়ে মৃত্যু এখন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে। মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সমাজের কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

 


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *