কুষ্টিয়ার মিরপুরে বিজিবি ও প্রশাসনের যৌথ অভিযানে সাড়ে ২৫ শত কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ

Spread the love

কুষ্টিয়া অফিস।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রায় আড়াই টনেরও বেশি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ছত্রগাছা দক্ষিণ পাড়ার একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে এসব পলিথিন উদ্ধার করা হয়। পলিথিনগুলোর ওজন প্রায় ২,৫৯৩ কেজি এবং এর আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন মিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কাজি মো. মেশকাতুল ইসলাম। অভিযানে অংশ নেন পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার সিনিয়র কেমিস্ট মো. হাবিবুল বাসার এবং ৪৭ বিজিবির সহকারী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার মো. জাকিরুল ইসলাম।
অভিযানটি পরিচালিত হয় ৪৭ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, পিএসসি-র সরাসরি দিকনির্দেশনায়।
অভিযানে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনের অবৈধ মজুদ ও সরবরাহ চলছিল বলে তারা তথ্য পেয়ে তৎপরতা শুরু করেন। এরপর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ছত্রগাছা দক্ষিণ পাড়ার একটি গোপন গুদামে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ পলিথিন উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি মো. মনিরুল ইসলামকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উদ্ধারকৃত নিষিদ্ধ পলিথিন পরিবেশ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়া কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো ধ্বংস করা হবে।
উল্লেখ্য, সরকার ২০০২ সালে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু এরপরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চোরাইপথে এবং গোপনে এসব পলিথিন মজুদ ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রয়েছে। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
অভিযান শেষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কাজি মো. মেশকাতুল ইসলাম বলেন, এটি একটি বড় সফলতা। নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান রয়েছে। আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয়ে নিয়মিত এ ধরনের অভিযান চালিয়ে যাব।
অভিযানে অংশ নেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পলিথিন মাটি ও পানির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে। এটি বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে এবং জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। এছাড়া, পলিথিন বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার সময় বায়ু দূষণ এবং ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে ভারতে পাচারযোগ্য সামগ্রী, মাদক ও নিষিদ্ধ পণ্য ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিজিবি প্রতিনিয়ত নজরদারি ও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁরা বলেন, “নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়বে। আমরা চাই, এই অভিযান চলমান থাকুক এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের দাবি, শুধুমাত্র জব্দ বা জরিমানাই যথেষ্ট নয়—নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও সরবরাহ চক্র সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাও জরুরি।


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *