
আক্তারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া।
রোল কলের পরিবর্তে কিউআর কোড স্ক্যানিং, সময় সাশ্রয় ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত
বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল কুষ্টিয়ার আমলা সরকারি কলেজ। ২৪ আগস্ট রবিবার থেকে এখান আর প্রচলিত রোল কল নয়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নির্ধারণ হবে কিউআর (QR) কোড স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে। শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডে সংযুক্ত কোড স্ক্যান করার সাথে সাথেই তথ্য চলে যাচ্ছে কলেজের কম্পিউটার সার্ভারে। কয়েক সেকেন্ডেই সম্পন্ন হওয়া এই কাজ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের কাছেই এনে দিয়েছে স্বস্তি ও দক্ষতা।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা সহজ, সাশ্রয়ী ও নির্ভুল উপস্থিতি ব্যবস্থার খোঁজে ছিলেন। বড় ক্লাসে ১৫–২০ মিনিট ধরে রোল কল করতে গিয়ে পড়াশোনার মূল সময় নষ্ট হতো। নতুন সিস্টেম চালুর ফলে সেই জটিলতার অবসান ঘটেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আ. জ. ম মনিরুল ইসলাম বলেন, “নতুন এই উদ্যোগে সময় বাঁচবে, স্বচ্ছতা বাড়বে, আর শিক্ষকরা পাঠদানে আরও মনোযোগী হতে পারবেন। ভবিষ্যতে অভিভাবকদের কাছে মোবাইল অ্যাপ বা এসএমএসের মাধ্যমে উপস্থিতির তথ্য পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।”

শিক্ষার্থীরাও আনন্দিত। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আগে রোল কল নিতে অনেক সময় লাগত। এখন কয়েক সেকেন্ডেই কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে।” ডিগ্রী বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম মনে করেন, “এই ব্যবস্থা কলেজের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
অভিভাবকেরাও উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় অভিভাবক কাজেম আলী বলেন, “সন্তান সত্যিই কলেজে এসেছে কি না তা বোঝা যেত না। এখন প্রযুক্তি আমাদের সেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে।” অন্য অভিভাবক জাহারন খাতুন মন্তব্য করেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আজ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজেও বাস্তবায়িত হচ্ছে, এটা গর্বের।”
নতুন সিস্টেমে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে কিউআর কোড যুক্ত আইডি কার্ড। স্ক্যানারের মাধ্যমে উপস্থিতি রেকর্ড হওয়ার পর তা সরাসরি ডেটাবেজে যুক্ত হচ্ছে। শিগগিরই এ সিস্টেমে যুক্ত করা হবে—অভিভাবকের কাছে এসএমএস নোটিফিকেশন, অনলাইনে উপস্থিতি দেখার সুযোগ, স্বয়ংক্রিয় মাসিক-বার্ষিক রিপোর্ট এবং পরীক্ষার যোগ্যতার সাথে উপস্থিতির সমন্বয়।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ মজনুর রহমান বলেন, “আমলা সরকারি কলেজের পদক্ষেপ অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। শিক্ষাঙ্গনে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা আসবে।”
তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন—যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বা নেটওয়ার্ক বিভ্রাটে বিকল্প ব্যবস্থা, আর শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড হারালে তা দ্রুত প্রতিস্থাপন করা। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
সার্বিকভাবে বলা যায়, কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিতি নির্ধারণ শুধু একটি কলেজের উদ্যোগ নয়, বরং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন অধ্যায়। শিক্ষার্থীরা হবেন আরও নিয়মতান্ত্রিক, শিক্ষকরা পাঠদানে দেবেন বেশি সময়, আর অভিভাবকেরা নিশ্চিত হবেন সন্তানের উপস্থিতি সম্পর্কে। আমলা সরকারি কলেজের এই উদ্যোগ তাই একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষাঙ্গনে ডিজিটাল রূপান্তরের অনন্য উদাহরণ।