কুষ্টিয়ার মিরপুরে জাল নোট প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক ওয়ার্কশপ

Spread the love

আক্তারুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাল নোট একটি বড় হুমকি। বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমে জাল টাকা ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের উদ্যোগে এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি মিরপুর শাখার সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার মিরপুরে জনসচেতনতামূলক এক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই কর্মশালায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, ব্যাংক কর্মকর্তারা, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের উপ-পরিচালক আসলাম হোসেন, সহকারী পরিচালক শামীম আহমেদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল্লাহেল কাফীসহ অনেকে।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার শামসুল ইসলাম। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিরপুর শাখার সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) মমতাজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও জাল টাকা চক্রের তৎপরতা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় চক্রটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাজারে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে তারা বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ে জাল টাকা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ঠকায়।

বক্তারা আরও বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে শুধু সরকার বা ব্যাংকের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। প্রতিটি নাগরিক যদি সতর্ক দৃষ্টি রাখে তবে এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড টেকা সম্ভব হবে না। একান্তভাবে সবার সহযোগিতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া জাল টাকা নির্মূল করা সম্ভব নয়।

ওয়ার্কশপে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা হাতে-কলমে কিভাবে আসল ও জাল নোট চেনা যায় তা তুলে ধরেন। তারা জানান, প্রতিটি নোটেই নির্দিষ্ট নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন জলের ছাপ, সিকিউরিটি থ্রেড, মাইক্রোপ্রিন্ট, লাল-সবুজ পরিবর্তনশীল কালার, অদৃশ্য লেখা ইত্যাদি। সচেতন নাগরিক যদি এসব বৈশিষ্ট্য খেয়াল করেন তবে সহজেই জাল নোট শনাক্ত করা সম্ভব।

কর্মকর্তারা আরও জানান, নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে জাল নোট তৈরি হলেও আসল নোটের নিরাপত্তা চিহ্ন হুবহু নকল করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিনের লেনদেনে নাগরিকদের সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতি নিরাপদ রাখা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। কারণ জাল টাকা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারণার শিকার করে। সমাজে যাতে কোনোভাবেই জাল টাকা প্রবেশ না করতে পারে, সে জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, মিরপুরে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে শুধু প্রশাসনিক তৎপরতায় নয়, ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের সক্রিয় ভূমিকা রাখলে জাল টাকা প্রতিরোধে আরও বেশি সাফল্য আসবে।

ওয়ার্কশপে উপস্থিত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, ঈদের আগে বাজারে লেনদেন বেড়ে গেলে জাল নোটের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। অনেক সময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর আহ্বান জানান।

ব্যবসায়ী আশিক বলেন, প্রতিদিন আমরা হাজার হাজার টাকা লেনদেন করি। সবসময় খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। তবে এ ধরনের প্রশিক্ষণ পেলে সচেতনতা বাড়ে। আমরা চাই এ উদ্যোগ শুধু মাঝে মধ্যে নয়, নিয়মিত হোক।

ওয়ার্কশপে বক্তারা জাল টাকা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তারা বলেন, প্রত্যেক নাগরিক যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তবে চক্রটি কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না। এ ছাড়া গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।

তারা আরও বলেন,  আজকাল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটেছে। এ খাতে জাল নোটের প্রবেশ ঠেকাতে হলে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনকে আরও নিরাপদ করতে হবে। পাশাপাশি নগদ লেনদেনে সজাগ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সারাদেশে ধাপে ধাপে এ ধরনের সচেতনতামূলক ওয়ার্কশপ আয়োজন করছে। আগামীতে ইউনিয়ন পর্যায়েও জাল নোট প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা জানান, এ ধরনের আয়োজন শুধু ব্যাংকার বা ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, সাধারণ জনগণের জন্যও করা উচিত। বিশেষ করে বাজার কমিটি, হাটের ব্যবসায়ী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এ প্রশিক্ষণে যুক্ত করলে সমাজে সচেতনতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

কর্মশালার সার্বিক আলোচনায় উঠে আসে, জাল টাকা প্রতিরোধে সরকারের আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীল হতে হবে। একা প্রশাসন কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তারা সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন না। তাই সমন্বিত উদ্যোগ, সক্রিয় নাগরিক সচেতনতা এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণই পারে জাল টাকা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

 


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *