
স্টাফ রিপোর্টার |
বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে শিক্ষা বোর্ডগুলো একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, দেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে নিজ দায়িত্বে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে। কোনোভাবেই গাইডবই কোম্পানি বা বাহ্যিক উৎসের প্রশ্ন ব্যবহার করা যাবে না। নির্দেশনাটি ইতোমধ্যে দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা বোর্ড ।
বোর্ডের স্পষ্ট বক্তব্য—অর্ধ-বার্ষিক, বার্ষিক, প্রাক-নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক নিজে তৈরি করবেন। এর ফলে শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইভিত্তিক অনুধাবন ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়বে, পাশাপাশি শিক্ষক নিজেও পাঠ্যসূচি ও শিক্ষার কাঠামো সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই একটি শ্রেণির গাইডবই প্রকাশনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। প্রশ্নপত্র সরবরাহের নামে এই কোম্পানিগুলো শিক্ষার্থীদের মুখস্থনির্ভর করে তুলছিল, ফলে তারা পাঠ্যবই থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। নতুন নির্দেশনার ফলে গাইডবই নির্ভরতা কমবে এবং পাঠ্যবই হবে জ্ঞানের মূল উৎস।

এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাহ্যিক প্রশ্নপত্র ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। শিক্ষকপ্রণীত প্রশ্নপত্রে থাকবে সৃজনশীলতা, পাঠ্যবইঘনিষ্ঠতা ও মূল্যায়নের বৈচিত্র্য। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের মানসিক উন্নয়ন ঘটবে এবং পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা পাবে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গাইডবই নির্ভর প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে ফেলে দেয় এবং জটিল ভাষা ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। অথচ শিক্ষক যদি নিজে প্রশ্ন তৈরি করেন, তাহলে তিনি শিক্ষার্থীর মান, শ্রেণি কার্যক্রম ও পঠনপাঠনের বাস্তব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী উপযোগী প্রশ্ন গঠন করতে পারেন। এতে শিক্ষার্থী আরও আত্মবিশ্বাসী হয় এবং পরীক্ষায় বাস্তবিক মূল্যায়ন সম্ভব হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক বিদ্যালয়কে একটি অভ্যন্তরীণ একাডেমিক কমিটি গঠন করতে হবে, যারা প্রশ্ন তৈরি, যাচাই ও সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ ব্যবস্থা চালু করেছে।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা বোর্ডের এ সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক বলে প্রশংসা করেছেন। তারা মনে করছেন, কেবল নির্দেশনা দিলেই চলবে না, এর সফল বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংও জরুরি।
বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষায় গুণগত উন্নয়ন, পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং পাঠ্যবইভিত্তিক অনুধাবন বাড়াতে শিক্ষা বোর্ডের এই নির্দেশনা এক বড় পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে একটি মানসম্পন্ন, চাপমুক্ত ও মূল্যায়ননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে আশা করছে শিক্ষা বোর্ড ।
তথ্যসূত্র: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশ (৮ মে ২০২৫), জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ ও সংশোধনী ২০২৩।