
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
গাজায় নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। পরমাণু ইস্যুতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইরানেও হামলা করে দেশটি। সিরিয়া ভুগছে জাতিগত দ্বন্দ্বে। এখন সেই সিরিয়াতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
দেশটির রাজধানী দামেস্কে একাধিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েল বলছে, এটি সিরিয়ার একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর পক্ষে করা হয়েছে। সেই গোষ্ঠীটির নাম দ্রুজ। সুওয়াইদা প্রদেশে ওই গোষ্ঠীর সাথে বেদুইন গোত্র ও সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাত চলছে। চারদিনেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২৫০জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই দাঙ্গার মধ্যেই ইসরায়েল দামেস্কর মধ্যাঞ্চলে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে।
সিরিয়া ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ইসরায়েলের ওই হামলার লক্ষ্য হচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সিরিয়ার নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা দূর্বল করা। সিরিয়াতে ইসরায়েল কেন নাক গলাতে গেল, সেই বিশ্লেষণ করেছে আল জাজিরা।
সিরিয়ার গোলান মালভূমির দখল ছাড়ছে না ইসরায়েল। তার ওপর এখন দেশটির রাজধানীতে হামলা করছে। ইসরায়েলের দাবি দ্রুজ জনগোষ্ঠী তাদের মিত্র এবং সরকারি বাহিনী ওই জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা করছে। ইসরায়েল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সামরিক সদর দপ্তরের কাছাকাছি এলাকায় হামলা করে। এমনকি প্রেসিডেনসিয়াল প্যালেসের কাছেও হামলা করেছে ইসরায়েল। যা নিজেরাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে। এছাড়া দেশটির দক্ষিণাঞ্চলেও হামলা করেছে ইসরায়েল।
আল জাজিরার সংবাদদাতা জেইনা খদর জানান, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান দামেস্কর আকাশে উড়ছিল। এতে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সিরিয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলেও দ্রুজ সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব আছে। দুই দেশেই তারা সংখ্যালঘু। অনেক দ্রুজ ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতেও কাজ করে বলে জানা যায়।
দ্রুজরা সংখ্যায় বেশি সিরিয়ার সুওয়াইদা এলাকায়। তবে নিজেদের মধ্যেও বিভেদ আছে। দ্রুজদের একাংশ সরকারি বাহিনীর সাথে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ওই অংশের নেতা ইয়াসের জারবু জানান, সরকারি বাহিনীর সাথে এখন যুদ্ধবিরতি চলছে। অন্য অংশ যুদ্ধবিরতি চায় না। ওই অংশের নেতা হিকমাত আল হিজরি যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ও তাঁর সতীর্থরা চান ইসরায়েল তাঁদের পক্ষ নিয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক।
বাশাল আল আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে প্রভাব বাড়াতে চাইছে ইসরায়েল। সুওয়াইদা প্রদেশেই গোলমাল। আর এলাকাটি ইসরায়েল ও জর্ডান সীমান্তের কাছে অবস্থিত। কৌশলগতভাবে এলাকাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুজদের রক্ষা ও সীমান্ত ঠিক রাখার নামে ইসরায়েল গত বুধবার জানিয়েছে, সিরিয়ার বাহিনী যদি সুওয়াইদা থেকে সরে না দাঁড়ায় তবে তারা অভিযান আরও বাড়াবে।
ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা করেছে সিরিয়া। বাশার সরকারের পতনের পর দেশকে নিয়ন্ত্রণের আনার চেষ্টা করছে সরকার কিন্তু সুওয়াইদা প্রদেশের অবস্থায় তা বেশ চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। দামেস্কভিত্তিক ওমরান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক আম্মার কাহফ বলেছেন, ‘সিরিয়ার সরকারকে পুরো ভূখণ্ডে কর্তৃত্ব বিস্তার করতে দেবে না ইসরায়েল।’ তিনি বলেন, ‘নতুন সরকারের ওপর ইসরায়েল নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন সব সিরীয়দের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার।’