
মো: রফিকুল ইসলাম।।
গাজা উপত্যকা—একটি দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ ভূমি, যেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন মৃত্যু ঘটে। কিন্তু সম্প্রতি যা ঘটেছে, তা কোনো সাধারণ ট্র্যাজেডি নয়—এটি একটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, একটি সংঘবদ্ধ নীরব হত্যাকাণ্ড। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে ইতোমধ্যে ৫৭ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এই মৃত্যু শুধুই সংখ্যার খেলা নয়, এটি প্রতিটি পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদ, শিশুদের মায়াহীন মৃত্যু, মায়েদের চোখে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রুধারা।
মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতা
গাজার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ নেই, খাদ্য গুদাম শূন্য, পানির উৎস ধ্বংসপ্রাপ্ত। অধিকাংশ শিশুর মুখে একফোঁটা দুধ নেই, দুর্বল শরীরে শুধু হাড়গোড়। মায়েরা সন্তানকে খাওয়াতে না পেরে বুক চাপড়াচ্ছেন। অনেকেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। আর এই মুহূর্তে, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বারবার চিৎকার করে বলছে—“We are failing Gaza.”

আন্তর্জাতিক নীরবতা ও দ্বিমুখিতা
পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে একেকটি দুঃখজনক ঘটনার পর মানবতার পাঠ পড়ায়, সেখানে ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যুর জন্য তাদের কণ্ঠে নীরবতা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একের পর এক প্রস্তাব পাস হয় না, ভেটো পড়ে। মানবতার কথা বলা রাষ্ট্রগুলো তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। একে কি কূটনৈতিক কৌশল বলব, না বর্বরতা বৈধ করার আধুনিক ভাষা?
সামাজিক মাধ্যম ও গণজাগরণ
যখন সরকারগুলো ব্যর্থ, তখন মানুষ সোচ্চার হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে গাজার ছবি, ভিডিও, বাস্তব চিত্র ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করছে, বয়কট করছে যুদ্ধ সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এই গণজাগরণ কি যথেষ্ট? যদি প্রতিদিন আরও শিশুর মৃত্যু হয়, যদি মায়েরা না খেয়ে মারা যান, তাহলে আমাদের মানবতা আসলে কোন দিকে যাচ্ছে?
বিশ্ব বিবেকের জাগরণ প্রয়োজন
গাজায় এখন শুধু খাদ্য নয়, প্রয়োজন ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সম্মানজনক বেঁচে থাকার অধিকার। মানবতা তখনই জীবিত থাকবে, যখন আমরা জাতি, ধর্ম ও ভূখণ্ডের ঊর্ধ্বে উঠে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াব। নইলে আজ গাজা, কাল কোথাও অন্যত্র—আর মানবতার এই মৃতদেহ তখন কোনো দেশে সমাধিস্থ হবে না, কারণ তখন আমাদের বিবেকও মৃত হয়ে যাবে।
উপসংহার
গাজার এই ৫৭ জন মানুষের মৃত্যু আমাদের সভ্যতার জন্য এক কলঙ্কচিহ্ন। এই মৃত্যুর দায় শুধু আগ্রাসী শক্তির নয়, এই নীরব বিশ্ববিবেকেরও। এখনো সময় আছে—বিশ্ব নেতৃত্ব, মানবাধিকার সংস্থা ও সাধারণ জনগণ মিলে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক উদ্যোগ নিলে হয়তো অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। ভাবতে অবাক লাগে এটাই নাকি সভ্য পৃথিবী, তাহলে অসভ্য কারা?
নীরবতা আজ অপরাধ। প্রতিবাদ হোক প্রতিটি হৃদয়ে।