
সম্পাদকীয়
পবিত্র ঈদুল আযহা: আত্মত্যাগ ও মানবিকতার এক অনন্য বার্তা
পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর জন্য শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি আত্মত্যাগ, আনুগত্য এবং মানবিক গুণাবলির এক গভীর অনুশীলন। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে উদ্যাপিত এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য এক ধর্মীয় আবেগ, ঐতিহ্য ও সামাজিক সমতার প্রতীক।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, ঈদুল আযহার শিকড় নিহিত রয়েছে মহানবী ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের ঘটনায়। তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এ আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত আজও মুসলিম সমাজে ঈমান ও বিশ্বাসের চরম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ঈমানের পরীক্ষায় কখনোই স্বার্থপরতা বা দ্বিধার জায়গা নেই।
সমাজে সহমর্মিতা ও সমতার প্রতিচ্ছবি
ঈদুল আযহা কেবল ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্বও। কোরবানির পশুর মাংস তিন ভাগ করে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এক মহান সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়—সবার জন্য সমান সুখ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠে এক সহমর্মিতাপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে ঈদের তাৎপর্য
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে আত্মকেন্দ্রিকতা, বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতা সমাজে বেড়েই চলেছে, ঈদুল আযহা আমাদের মনে করিয়ে দেয় আত্মত্যাগ ও সহানুভূতির প্রকৃত মূল্য। শুধুমাত্র পশু কোরবানির মধ্যেই এই উৎসব সীমাবদ্ধ নয়; বরং আমাদেরকে চর্চা করতে হবে আত্মিক পরিশুদ্ধির, লোভ-লালসা বর্জনের এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করার মনোভাব।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা জরুরি
ঈদুল আযহার সময় স্বাস্থ্যবিধি ও পরিবেশ সুরক্ষা বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। অপ্রয়োজনীয় যত্রতত্র পশু জবাই এবং বর্জ্য ফেলা শুধু পরিবেশের ক্ষতিই করে না, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বাড়ায়। তাই নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই, দ্রুত বর্জ্য অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা নাগরিক সচেতনতার অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত।
উপসংহার
ঈদুল আযহা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়—এটি আত্মত্যাগ, সহানুভূতি, মানবতা ও সামাজিক সাম্যের প্রতীক। আমরা যদি এই উৎসবের অন্তর্নিহিত শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজজীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে একটি ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব হবে।
আসুন, আমরা কেবল পশু কোরবানি নয়—নিজের অহংকার, হিংসা ও লোভকেও কোরবানি করি। ত্যাগ ও ভালোবাসার এই মহোৎসব হোক সকলের জন্য কল্যাণের বার্তা।
ঈদ মোবারক।